নগর পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে বাসভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। সব রুটেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তবে সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস্যভবন রুটে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত বাসভাড়া নেওয়া হয় ২০ টাকা। এই রুটে চলা মিডওয়ে, রমজান ও তরঙ্গ প্লাসসহ সব সিটি সার্ভিসেই এই ভাড়া নেওয়া হয়। সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানো বিভিন্ন বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া তরঙ্গ প্লাস গাড়িতে এই রুটে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদক নিজেও প্রত্যক্ষ করেন।
সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বাসের অপেক্ষায় থাকা এক যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ যে পরিমাণ বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে, সে অনুসারে নগর পরিবহনে নতুন ভাড়া হচ্ছে জনপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে আড়াই টাকা। সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস্য ভবনের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ নতুন নির্ধারিত ভাড়া অনুসারেই এই দূরত্বে সর্বোচ্চ ভাড়া হয় সাড়ে ৭ টাকা। সেখানে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায়ও তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো।
তবে সয়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে দায়িত্বরত তরঙ্গ প্লাসের লাইনম্যান মো. শফিকুল ইসলামের দাবি এখনো আগের ভাড়া অনুযায়ী ১৫ টাকাই নেওয়া হচ্ছে। নতুন ভাড়ার চার্ট এখনো আসেনি, তাই পুরোনো ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু ১৫ টাকা নিলেও তো দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে! সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস্য ভবন বা শাহবাগ থেকে মালিবাগের ভাড়া ১৫ টাকাই কী করে হয়? এ প্রশ্নের জবাবে লাইনম্যান বলেন, জানি না, বাস ভাড়া বাড়লে সাংবাদিকরা রাস্তায় খোঁজ নিতে আসে, কিন্তু সয়াবিন তেলের দাম যে বাড়ল, শাক-সবজির দাম যে বাড়ল, সেই খবর লেখেন না!
তিনি জানান, রমজান ও তরঙ্গ প্লাসের রুটে (মোহাম্মদ পুর থেকে বনশ্রী) চারটি ওয়েবিল আছে। ওয়েবিল হচ্ছে এ চারটি স্থানে গাড়ি থামিয়ে বাস কোম্পানির প্রতিনিধি যাত্রী গণনা করে তা নির্ধারিত কাগজে লিখে দেন। ওয়েবিলের এ চার স্থান হচ্ছে ঝিগাতলা, শাহবাগ, মালিবাগ ও রামপুরা। একজন যাত্রী এই ওয়েবিলগুলো অতিক্রম করলে যথাক্রমে (আগের ভাড়া অনুসারে) ১০, ১৫, ১৫ ও ১০ টাকা করে ভাড়া দেবেন। যদিও সরকারি নিয়ম হচ্ছে নগর পরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আড়াই টাকা।
কাকরাইল এলাকায় আরেক যাত্রী আবদুর রশিদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাসভাড়া বাড়ার পর আজ (বৃহস্পতিবার) পাঁচ দিন হতে চললো, এখনো বাসে চার্ট সাঁটানো হয়নি। কারণ হচ্ছে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার চেয়ে বাসগুলো দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে। চার্ট সাঁটানো হলে এটা যাত্রীদের চোখে ধরা পড়ে যাবে। তাই সাঁটানো হচ্ছে না।
তবে বিআরটিসির নগর পরিবহনে এখনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ঘাটারচর থেকে বসিলা, মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে চিটাগং রুটে চলা বিআরটিসির নগর পরিবহনের ভাড়া এখনো আগের সমানই আছে বলে জানান স্যায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে দায়িত্বরত কাউন্টারম্যান কাজী মাসুদুর রহমান।
ঢাকাপ্রকাশকে তিনি বলেন, আমাদের সফটওয়্যারে নতুন ভাড়া এখনো বসানো হয়নি। দুই-একদিনের মধ্যে মনে হয় বসানো হবে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের বর্ধিত দাম কার্যকর করা হয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন গত শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নতুন বাসভাড়া ঘোষণা করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার পথে বাসভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। নগরে বাসভাড়া বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ।
দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৪০ পয়সা বেড়ে ২ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ নগর পরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা ভাড়া বেড়ে এখন ২ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
এমএ/এসএন