রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন এবং কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির কার্যক্রম দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নীরবতায় এই কার্যক্রমটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং প্রায় অর্ধ শতাধিক পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। এছাড়াও কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির ফলে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
২০ মার্চ, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের বেতগাড়া গ্রামে সালামের ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাঘট নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় কুরফানের ছেলে রমজান। অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রমজান জানান, তিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, থানা পুলিশ, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। তবে ভাংনী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিইনি এবং এই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”
এছাড়াও কাফ্রিখাল ইউনিয়নের বুজরক তাজপুর এলাকায় শাহ আলম প্রায় তিন মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। মো. আবুল হোসেন নামক এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই ইউনিয়নের সাতভেন্টি এনায়েতপুরে পুকুর এবং আবাদি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কাটার কাজ চলছে, যার ফলে স্থানীয় রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, চেংমারি ইউনিয়নের কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেন না। একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরও অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এবং কিছুদিন পরেই বালু উত্তোলনকারীরা আবার শুরু করে একই কাজ। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে আসার আগেই বালু ব্যবসায়ীরা স্থান ত্যাগ করেন, কারণ তারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আগে থেকেই খবর পেয়ে যান।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, টপ সয়েল (জমির উৎকৃষ্ট প্রাণ) বিক্রি কৃষকদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই অংশেই জমির প্রাণ শক্তি থাকে, যা কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। অথচ, মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রশাসনের নীরবতায় টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব চলছে, যা ভবিষ্যতে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে।
মিঠাপুকুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুলতামিস বিল্লাহ জানান, “অভিযোগ পেলেই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করি।” তবে তিনি স্বীকার করেন, কখনও কখনও অভিযানের খবর বালু উত্তোলনকারীদের কাছে পৌঁছে যায়। তিনি বলেন, “যদি আমার অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই কাজে জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র জানান, “অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলায় অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি। যদি কেউ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে এমন কাজ করে থাকে, তবে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
এছাড়াও ২৪ মার্চ মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের খোর্দ্দ গোপালপুর, এনায়েতপুর, এবং বুজরুক তাজপুর এলাকায় অবৈধ মাটিকাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ট্রাক্টর, ভ্যান, পাম্প মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয় এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া, অন্যান্য স্পটে নিয়মিত মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।