সরে দাঁড়ালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ সমন্বয়ক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ সমন্বয়ক। অন্য সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটির ১৪ সমন্বয়ক। অন্য চারজন সমন্বয়ক প্রাথমিক চাওয়াগুলো পূরণ হয়েছে মনে করে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
শনিবার (১৭ আগস্ট) তিন পৃষ্ঠার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা।
যৌথ বিবৃতি দেওয়া সমন্বয়করা হলেন ইভান তাহসীব, কিশোর সাম্য, সিয়াম হোসাইন, অরুণাভ আশরাফ, মুজাহিদ বাপ্পি, শওরীন হাসান ইরা, নাজমুল হাসান, ফয়সাল মুরাদ, মুগ্ধ আনন, খাদিজা তুল কুবরা, কামরুল হাসান রিয়াজ, কাজী আহাদ, আপেল মৌলানা, যুবায়ের আহমেদ শাফিন।
তাদের গুরুতর অভিযোগগুলোর ভেতরে রয়েছে- সমন্বয়হীনতা, নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করা, প্রভাব বিস্তার, অপ্রয়োজনীয় লিঁয়াজো কমিটি গঠন করা, বিচার শালিস করা, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এবং হল উদ্ধারের নামে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক স্বর্ণা রিয়া এবং আলী আহম্মেদ আরাফ গত ১৪ অগাস্ট ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে সমন্বয়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।
১৪ অগাস্ট পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়ে স্বর্ণা রিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসের সাজিদ ভাই মারা গেল। তিনি দেশের প্রয়োজনে প্রাণ দিলেন, অথচ তার পূর্ণ সম্মান আমরা দিতে পারিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর যেই আশা রাখেন, তাদের আশা সম্পূর্ণভাবে পূরণ লরতে পারিনি বলে আমি আমার জায়গা থেকে সরে গেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণে আমরা ব্যর্থ, কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়েছি।”
যদিও স্বর্ণা কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলেছেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের পদ থেকে এখনই সরছেন না বলেই তার ভাষ্য।
সমন্বয়ক পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আলী আহাম্মেদ আরাফ গত ১৪ অগাস্ট ফেইসবুকে লেখেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য আমি আমার ক্যারিয়ার ও লাইফকে রিস্কে রেখে সমন্বয়কের এই দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আন্দোলন সফল না হলে হয়ত এতদিনে আমার ঠিকানা হত আয়নাঘরে, নয়তো কবরে। তবে আন্দোলন সফল হওয়ায় আমি কোনো ক্রেডিটও নিতে চাই না। কখনো কাউকে পরিচয় দেওয়ার সময় বলিও নাই যে আমি জবির সমন্বয়ক।
“যেহেতু আন্দোলন সফল হয়েছে এবং সমন্বয়কের দায়িত্বটা আন্দোলনের জন্যই নেওয়া, সেহেতু এখন আর এটার প্রয়োজন বোধ করছি না। একই সাথে শহীদ মিনারে সাজিদ ভাইয়ের লাশকে সামনে রেখে যে অপরাজনীতি হয়েছে, যে অবজ্ঞা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করছি।“
এর আগে শনিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জবি ইউনিটকে নেতৃত্ব প্রদান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সমন্বয়ক থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে সমন্বয়ক পদ থেকে সরে গেলেও যেকোনো আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।