অনন্য ড. কাজী আজহার আলী
সোহেল আহসান নিপু
বাংলাদেশে অনেকগুলো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলোর প্রতিষ্ঠাতাদের নাম কখনো, কখনো আমাদের নজরে আসে। বিভিন্ন সময়ে তেমনদের নিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে (যেমন এম এ হাশেম-নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিল্পগোষ্ঠী পারটেক্স গ্রুপের রূপকার) লেখা প্রকাশিত হয়। এই মানুষদের ভীড়ে ড. কাজী আজহার আলীর নাম কী খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়? তিনি খুব সুন্দর একটি নাম, দেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ‘বাংলাদেশ ইউনিভাসিটি’র প্রতিষ্ঠাতা।
অসাধারণ মেধাবী মানুষটির কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। পাকিস্তানের তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কেবল মেধা ও যোগ্যতার বলে যোগদান করেছিলেন তিনি, কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবেন বলে।
তার ভেতরে ছিল বাংলাদেশীদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের বঞ্চনার ক্ষোভ, পূর্ব বাংলার মানুষদের ভালো করার অদম্য ইচ্ছে। তবে লেখাপড়ায় খুব ভালো এই ছাত্রটি সিএসপি অফিসার হবার পরেও বিদ্যার্জন চালিয়ে যান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার বিরল যোগ্যতা লাভ করেন তিনি।
সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ছিলেন মহকুমা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শোষিত ও অবহেলিত বাঙালিদের ন্যায্য দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য স্বোচ্চার হয়েছেন। কাজ করেছেন প্রাণপণে। ফলে তাদের অধিকার প্রদানে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান সরকার।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার গৌরবময় অবদান আছে।
ড. কাজী আজহার আলীর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলে এই দেশের জন্য বিপুল স্পৃহা নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন তিনি। কর্মজীবনে বাংলাদেশের ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ বান্ধব নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়নে তার ইতিবাচক অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।
সামরিক সরকারের আমলে উগ্র শাসন প্রতিষ্ঠাকে তিনি জনগণের ও দেশের প্রতি ভালোবাসার স্বার্থে মোকাবেলা করেছেন। তাতে দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে কয়েকবার রক্ষা পেয়েছে।
ড. কাজী আজহার আলী সরকারী বিদুৎ বোর্ডের (এখন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পযন্ত দুর্গম এলাকাটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন তিনি।
সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে সারাজীবন কাজ করেছেন তিনি চাকরির পাশাপাশি। প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি (বিইউ)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। কাজ করেছেন অবৈতনিক উপাচার্য হিসেবে। এছাড়াও ঢাকার মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে তার অবদান আছে।
দেশের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। জন্মেছেন বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার সৈয়দ মহল্লা গ্রামে। সেখানেও ‘ড. সাকিনা আজহার টেকনিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এসবই তার শিক্ষানুরাগ ও সমাজ সেবার অংশ। পিছিয়ে পড়াদের অগ্রসর করে তোলার প্রচেষ্টা।
নানা বিষয়ে লিখেছেন ড. কাজী আজহার আলী। আত্মজীবনী আছে ‘তিনকাল’। আরো লিখেছেন গুরুত্বপূণ বই-‘স্টেট ট্রেডিং অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন ইকনোমি’, ‘রুরাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’, ‘ডিস্ট্রিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন বাংলাদেশ’ (বাংলায় আছে ‘বাংলাদেশে জেলা প্রশাসন’), ‘ডিসেনট্রালাইজড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ইন বাংলাদেশ’, ‘ইতিহাসের অলিগলি’, ‘আমার দেখা একুশ’, ‘কাজের ফাঁকে ফাঁকে’, ‘ঝড়ো হাওয়ার মাঝে’, ‘সেইসব দিনগুলি’, ‘স্মৃতির পাতা থেকে’ ইত্যাদি।
প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বর তার বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি (বিইউ) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজী আজহার আলীর মৃত্যুবাষিকী পালন করা হয়। মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের খাবার বিতরণ ও কোরআন খতমের আয়োজন থাকে। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হয়।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি।
মোবাইল : ০১৭৫৫৫৫৯৩১০, ই-মেইল : nipubu@gmail.com