অনেক আবিস্কার আছে
ইফতেখার আহমেদ ফাগুন
আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। টাঙ্গুয়া, হাকালুকি, হাইল হাওড়ের নাম তো বাংলাদেশ ও বিশ্বের ভ্রমণপিয়াসু; পরিবেশবাদী সব মানুষের জানা। এগুলো কেবল আমাদের নয়, সারা বিশ্বেরও সম্পদ।
টাঙ্গুয়ার হাওড়কে ইউনেসকো ‘রামসার সাইট’ ঘোষণা করেছে। বিশ্বজুড়ে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আশ্রয় ও আবাসস্থল এই হাওড়গুলো। আশপাশের গরীব জলজীবি ও কৃষিজীবীদের বেঁচে থাকার আশ্রয়।
পুরো সিলেটে ছড়িয়ে আছে চা বাগান। বাংলাদেশের চা শিল্পের প্রাণ বাগানগুলো। সিলেটের চা খাননি বিশ্বে এমন মানুষ কী আছেন? টিলা, পাহাড়, সমভূমি ও জলাভূমির সিলেটের কৃষি ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশে এবং সেগুলোর প্রাণপ্রবাহ, ভবিষ্যতের উন্নয়নের প্রধান কেন্দ্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে, দেখতে ১৫ বছরে পা রাখলো।
সে উৎসব করতে মহামারি রোগের ভেতরে, করোনা ভাইরাসের আক্রমণের মধ্যেও ক্যাম্পাসে আসা থামানো যায়নি ছাত্র, ছাত্রী; শিক্ষক, কমকতা, কর্মচারীদের। একটু দেরিতে এই খবর জানালেও যারা জানেন না, তাদের বলছি-সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন ২ নভেম্বর।
এদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে সব বিভাগের শিক্ষক ও সর্বস্তরের কমকতা-কমচারীদের শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু, নানা রঙের বেলুন ও সাদা পায়রা শান্তির প্রতীক উড়িয়ে ভিসি স্যার প্রতিষ্ঠাবাষিকীর শুরু করে দেন। সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে পুরো ক্যাম্পাসে ঘুরে আসার জন্য বর্ণাঢ্য যাত্রার শুরু হলো। টিলাগড় চত্বরও ঘুরে আসে।
বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশের তৃতীয় ‘ইকোপাক’ হলো ‘টিলাগড় ইকোপাক’। ছোট, বড় টিলার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ছড়া। লাক্কাতুরা চা বাগান ও শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রটি এখানে।
এরপর আমরা ফিরলাম ক্যাম্পাসের টিএসসিতে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কেটে বিলিয়ে দেওয়া হলো সবাইকে।
আমাদের গ্রামগুলোকে ভুলিনি
টিএসসির বৈশাখী চত্বরে শুরু হলো গ্রামীণ নানা বিনোদন আয়োজন। প্রথমেই লাঠিখেলায় মেতে উঠলেন খেলোয়াড় ছাত্ররা। আজ খেলাটির দেখা পাওয়া ভার। তারপর হারানোর দিকে চলে যাওয়া পুতুলনাচ। তাতে অংশ নিলেন ছাত্রী এবং শিক্ষিকারাও। কাপড়ের পুতুলে প্রাণ ফিরে এলো স্থানীয় সংলাপ, সঙ্গীত আর বাজনার তালে। আয়োজনগুলোতে দর্শক ছিলেন আমাদের অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকতা, কর্মচারী ও শহরের গণ্যমান্যরা।
পুরোনো এক ইতিহাসের নতুন গল্প
‘সিলেট ভেটেরিনারি কলেজ’ রূপান্তরিত হয়েছে সিলেটের গর্ব ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’-এ। জন্ম ২০০৬ সালে। শ্লোগান-‘কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি’। সিলেটের টিলাঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে আছে। এখন ছয় অনুষদ ও ৪৭ বিভাগের বিরাট ক্যাম্পাস। সেগুলোর মাধ্যমে চলছে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা। অনেক আবিস্কার আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ছাত্রছাত্রীদের।
কটি বলি-সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ‘আগাম ধান চাষ’ শুরু করে প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন, ‘বছরব্যাপী উৎপাদনশীল শিম জাত উদ্ভাবন’, ‘চাষীদের নিয়মিত কৃষি আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান’, ‘গ্রীষ্মে চাষের জন্য শিম ও টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবন’, ‘বাগানগুলোর উৎপাদিত চায়ের মান নির্ণয় যন্ত্র আবিস্কার’, ‘স্বয়ংক্রিয় জলসেচ যন্ত্র তৈরি’, ‘উলম্বাকৃতির ভাসমান খামারের একটি স্থানেই বেশি শষ্য উৎপাদন কৌশল’, ‘মাছের মড়ক রোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার’, ‘জলাবন রাতারগুল ও হাওরাঞ্চলে দেশী জাতের মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম গড়ে তোলা’, ‘হাওড়বাওড়ের মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন’, ‘মাৎস্যচাষে সয়াগ্রোথ বোস্টার নামের পরিপূরক প্রোটিন আবিষ্কার’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামুদ্রিক কুয়াশা নির্ধারণ’, ‘স্যাটেলাইটের তথ্য স্থানান্তর কৌশলের মাধ্যমে সামুদ্রিক দূর্ঘটনা রোধ’ ইত্যাদি।
ভিসি স্যার বললেন
অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার তার বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আগামী ২০ বছর মেয়াদী উচ্চমানের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সাহায্য পেলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেন্টার অব এক্সসিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তুলব।”
তিনি আরো বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের আক্রমণেও অন্য বিশ্ববিদ্যালগুলোর মতো আমরা গবেষণা, উন্নয়ন ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় যাতে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সবাই কাজ করছেন। তাতে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেতে পারবে।’
ওএস-২১/১/২০২২।