সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের মারধর, ববির দুই শিক্ষার্থী আহত
আবাসিক হলেরি সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মাহমুদুল হাসান দোলন এবং আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তারেকুজ্জামান তারেক।
গত ৫ জুলাই মধ্যরাতে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শেরে-ই বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান দোলনকে ডেকে নিয়ে ক্যাম্পাসের মাঠে মারধর করেন একাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলাম। এরপর গুরুতর আহত শিক্ষার্থী দোলনকে ওইদিন রাতেই শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করান তার বন্ধুরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান মারধরের শিকার মাহমুদুল হাসান দোলন।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৩ আগস্ট রাত ১২টার দিকে সিট দখলকে কেন্দ্র করে শেরে বাংলা হলের পঞ্চম তলায় আবাসিক শিক্ষার্থী এবং আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র তারেকুজ্জামান তারেককে মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সোহাগ, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রাকিবুল হাসান।
জানা যায়, অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাতের অনুসারী। সিফাতকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে নামিয়ে দিলে শেরে-ই বাংলা হলের ৪০১৮ নম্বর রুম অবৈধভাবে দখল করে আছেন তিনি।
এরপর এ ঘটনার বিচার চেয়ে শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট বরাবর গত ২৮ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
মারধরের ঘটনার সময় মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৫ম তলার কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী। ভিডিওতে দেখা যায়, তারেকুজ্জামান তারেককে মারতে মারতে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসছেন অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন এবং সোহাগ। মারতে মারতে রুমের বাইরে নিয়ে এলে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরেক অভিযুক্ত রাকিবুল হাসান।
প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে সঙ্গবদ্ধভাবে ৫০১৩ নম্বর রুম ও আমার রুমের (৫০১২ নং রুম) সামনে আমার উপর নির্বিচারে হামলা, মারধর ও নির্যাতন চালায় গণিত বিভাগের দেলোয়ার (কক্ষ নং ৫০০১), মার্কেটিং বিভাগের সোহাগ (কক্ষ নং২০০৩) এবং বাংলা বিভাগের রাকিবুল হাসান (কক্ষ নং ৫০০৯) ।
অভিযোগপত্রে তিনি আরও বলেন, ‘উক্ত ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তদন্তপূর্বক এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, ওই দিন রাত ১২টার দিকে দেলোয়ার ও সোহাগ বিভিন্ন রুমে গিয়ে সিট ফাঁকা আছে কি না তল্লাশি করে। এর এক পর্যায়ে ৫০১২ নম্বর কক্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে বেধম মারপিট করে৷
শেরে বাংলা হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ ছাত্রদের জন্য হল এখন আতঙ্কের নাম। বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী হলের বিভিন্ন রুমে রুমে গিয়ে ফাঁকা সিট আছে কি না এমন খোঁজ-খবর নিচ্ছে। বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক ফাঁকা সিটে অবৈধভাবে ছাত্র উঠাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেনের বলেন, ‘আমি ওই আবাসিক হলের ছাত্র কিন্তু আমি এই মারামারির বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি ওই দিন হলে ছিলাম না এবং মারামারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
অভিযুক্ত সোহাগ বলেন, ‘আমি মারামারির সঙ্গে জড়িত নই। এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও আমার জানা নেই। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ।’
আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলামের কাছে মাহমুদুল হাসান দোলনকে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন যেখান থেকে এই তথ্য পেয়েছেন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। এসব বিষয়ে কথা বলার মতো সময় আমার নেই।’
এ বিষয়ে শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক দুইজন আবাসিক ছাত্রকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হল প্রশাসন থেকে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর ছাত্র উঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। হলে সিট বরাদ্ধ দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র হল প্রশাসনের।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি মাহমুদুল হাসান দোলনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। আর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রয়োজনে আরও সময় লাগতে পারে এবং দ্বিতীয়বার গত ২৩ আগস্টের ঘটনার বিবরণে তার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।’
এসআইএইচ