দুই দশকে পা রাখলো ‘চুয়েট’
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র জন্ম ১ সেপ্টেম্বর। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়েট আত্মপ্রকাশ করেছে।
এই প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল।
১৯৮৬ সালের ১ জুলাই স্বায়ত্বশাসিত ‘বিআইটি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
এখন ১২টি বিভাগে ৯শ ২০টি ছাত্র, ছাত্রী আসন এবং আদিবাসী ও কোটা ১১টি আসনসহ ৯৩১ আসন রয়েছে।
প্রথম থেকে মাস্টার্সে চুয়েটে ৬ হাজার ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ ১শ জন পিএইচডি ডিগ্রীধারী শিক্ষক রয়েছেন। মোট ৩শ ৪০ জন শিক্ষক আছেন।
১৬০ জন কর্মকর্তা ও ৪৩৫ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।
একটি পরিবার হিসেবে চুয়েটকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রত নিয়ে তারা সবাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর চুয়েট তার ২০তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী পালন করেছে।
শিরোনাম ছিল ‘চুয়েট ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২’। সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে সভাটি হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়েটের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের কৃতি সন্তান একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, কবি, সাংবাদিক এবং আবুল ফজলের ছেলেআবুল মোমেনের হাতে চুয়েটের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। তিনি ‘চুয়েট ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’র আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সভাপতিত্ব করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তাহমিনা আক্তার, স্টাফ ওয়েলফেয়াল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহাম্মদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আমিন মোহাম্মদ মুসা, স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পিএমই ‘১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আল আমিন ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ. টি. এম. শাহজাহান এবং ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনায় চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, “দক্ষ ও নব জ্ঞানের অধিকারী ছাত্র, ছাত্রী তৈরি; নতুন, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও জনকল্যাণমূলক গবেষণাই হচ্ছে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ। গবেষণা ক্ষেত্রে আমাদের চুয়েট নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রেখে যাচ্ছে। সরকারের রূপকল্প-২০৪১ অনুসরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চুয়েটে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের প্রথম ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ তৈরি ও উদ্বোধন করেছেন। আমরা আশা করব, ইনকিউবেটরের সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের ও চুয়েটের তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে সুদক্ষ হবেন। আজকের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যারা বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখেছেন, বর্তমানেও নিরলসভাবে অগ্রযাত্রাকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, আমি তাদের সকলের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।”
‘চুয়েট ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২’ আলোচনায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, কবি, সাংবাদিক এবং আবুল ফজলের ছেলে আবুল মোমেন বলেছেন, “আমরা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। পারিবারিক বন্ধনও আলগা হয়ে আসছে। প্রযুক্তি আমাদের বশীভূত করে রেখেছে। ফলে আমাদের সামাজিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের সামাজিক মননে ও মনোজগতে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শুধু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি তাই নয়, একইসঙ্গে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকট হয়েছে, বাংলাদেশে বিপুল প্রভাবে খরা, ফসলহানি ও বন্যা বেড়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানবজাতি এবং সভ্যতাও এখন বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পযায়ে চিন্তা ও কম পরিচালনা করতে হবে। ভবিষ্যত প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা কেবলই জ্ঞান ও উদ্ভাবনের ভোক্তা হয়ে থাকলে হবে না, নির্মাতার ভূমিকায় আসতে হবে। সেজন্য আগামী দিনের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীদের সমাজে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, চুয়েটে সে ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে।”
আলোচনা সভা শেষে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে তাদের সবার রক্তদান কর্মসূচি হয়েছে।
শিক্ষক বনাম ছাত্র ও কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং পুরষ্কার বিতরণ করা হয়েছে।
লেখা ও ছবি : মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
ছবি : চুয়েটের দুই দশকের শোভাযাত্রা, বেলুন ওড়ানো, আলোচনা সভার অতিথিরা, ভিসি অধ্যাপক ড. এম. রফিকুল আলম এবং প্রধান বক্তা আবুল মোমেন।
ওএফএস।