কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ

লেখা ও ছবি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র, ছাত্রীরা অনেকগুলো অভিযোগ করে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন। সেদিন ২৪ আগস্ট একই চিঠি উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও অনুষদের ডিন বরাবর জমা দিয়েছেন তারা।
অভিযোগের কারণে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করে দিতে পারেন বলে অভিযোগপত্রে নিজেদের নাম উল্লেখ করেননি তারা কেউ।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভাগীয় প্রধান ড. বনানী বিশ্বাস তাদের সাথে বিভিন্ন সময় অসদাচরণ করেন।
কোনো বিষয়ে তার কক্ষে দেখা করতে গেলে খারাপ আচরণ করেন।
প্রায় সময়ই ‘হু আর ইউ’ বলে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের করে দেন।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, একটি সেমিস্টারে সিলেবাসের মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কোর্স নিতে চাইলেও তিনি তাদের কোর্স দেননি। উল্টো শিক্ষার্থীদেরকেই ওই কোর্স পরিচালনা করতে বলেছেন।
বিভিন্ন সময় শ্রেণীকক্ষেই অন্য শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন-অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পরিবারের জন্য বাজার করানোসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন।
কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি দেন।
খোঁজ নিয়ে অভিযোগকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। একজন বলেন, ‘ড. বনানী বিশ্বাস ম্যাডামের অসদাচরণে আমরা অতিষ্ঠ। অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করলে আমাদের ফলাফল খারাপ করে দেবেন। তার খারাপ ধরণের আচরণ থেকে মুক্তি পেতে উপাচার্য স্যার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি সবাই। সাবেক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’
স্নাতকোত্তরে থিসিস পাওয়া শিক্ষার্থীরা তার অধীনে কাজ না করার কারণে অন্যান্য কোর্সে নাম্বার কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভাগের একজন অধ্যাপক।
অভিযোগের সত্যতা জানতে ইংরেজি বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেছেন, ‘বিভাগীয় প্রধান ড. বনানী বিশ্বাসের এমন আচরণে সহকর্মী হিসেবে আমরা লজ্জিত ও বিব্রত। তিনি তার ছাত্র, ছাত্রীদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করেন না, অন্য অধ্যাপকদের সঙ্গেও করেন। প্রায়ই অধ্যাপকদের নামে মিথ্যা অভিযোগ ও খারাপ কথা বলেন। মতের অমিল হলে হেনস্তা করতে ছাড়েন না। সস্প্রতি জুনিয়র প্রভাষকদের নিজের গ্রুপে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়েছেন।’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ড. বনানী বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, ‘এই কাজগুলো আমাদের কোনো ছাত্র বা ছাত্রী করতে পারে না। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিভাগের ২ শতাংশ শিক্ষার্থীরও যদি আমার প্রতি অসন্তোষ থাকে, আমি সব ছেড়ে দেব। প্রতিটি মিড টার্মের ফলাফল দিয়ে তাদের খাতা দেখাই। অন্যান্য শিক্ষকদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা আমাকে অভিযোগ দেওয়ায় তারা আমার নামে মিথ্যাচার করছেন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠানো হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘একটি বেনামী চিঠি পেয়েছি। কেউ যদি তাতে স্বাক্ষর করত বা আমার সঙ্গে দেখা করে ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিত, তাহলে আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিতাম।’
শিক্ষার্থীরা তো পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়ার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে চায় না- এই এসএমএস পাঠানোর পর গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন।
ছবি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অভিযুক্ত প্রধান ড. বনানী বিশ্বাস ও তার বিপক্ষে ছাত্র, ছাত্রীদের জমা দেওয়া অভিযোগপত্র।
ওএফএস।
