‘দুটি পাতা, একটি কুঁড়ি, মজুরি চাই ১৫ কুড়ি’

লেখা ও ছবি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
‘বাংলাদেশে মোট চা বাগান আছে সরকারী হিসেবে ১৬২টি। চায়ের দেশ সিলেটের মৌলভীবাজারে আছে সবচেয়ে বেশি ৯১টি চা বাগান। আমি এই জেলার ছেলে ও চা শ্রমিকের সন্তান। ছোট থেকে দেখে আসছি আমাদের নারী চা শ্রমিকদের দুর্দশা ও দুঃখের জীবন। এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন বাগানের পরদেশী আমরা চা শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরির দাবীতে তুমুল অহিংস আন্দোলনে নেমেছি। আমরা বন্ধুরা সবাই তাদের পক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসেছি। আমরা চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে একজন মানুষও শোষিত থাকবেন না। সরকারের প্রতি আবেদন, চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবীগুলো মেনে নেন। তাদের জীবনমানের উন্নতি করুন’-কথাগুলো প্রতিবাদ সমাবেশে বলেছেন চা শ্রমিকের ছেলে নয়নচন্দ্র মোদক। তিনি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের মেধাবী ছাত্র। তারা সবাই সিলেট জেলা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনে নেমেছেন। সিলেটসহ সারা দেশের সব চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক ৩শ টাকা মজুরি দেবার দাবীর সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিসৌধের সামনে তাদের মানববন্ধন হয়েছে বেলা ১১টায়। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন জালালাবাদ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসরুর আরাফাত, সহযোগিতা করেছেন সংগঠক সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার।
ছাত্র, ছাত্রীরা জানিয়েছেন, ১২ আগস্ট থেকে দিনে ১শ ২০ টাকা চা পাতা তোলা সাপেক্ষে পূর্ণ মজুরি পাওয়ার অধিকার বদলে ৩শ টাকা করে সবাইকে দেবার দাবীতে নারী শ্রমিকদের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনে সংগঠক আছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চা শ্রমিকদের ছেলে, মেয়েরা। এই আন্দোলনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান ধর্মঘট করছেন তারা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে।
তাদের দাবীর প্রতি নানা ক্যাম্পাস থেকে প্রথমেই সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংহতি এবং সমর্থন জানিয়েছে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আলোচনা, প্রতিবাদ চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনে শরিক হয়েছে। এই সমাবেশে উপস্থিত ইতিহাসের ছাত্র রাকিব তালুকদার বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে ও চায়ের বাংলাদেশে অসাধারণ বিক্রির পরও চা শ্রমিকরা তেমন কোনো জীবনই যাপন করতে পারছেন না শত বর্ষ ধরে। কেন? চা শ্রমিকদের প্রতি আমরা জালালাবাদ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সমর্থন ও সংহতি জানাই। তাদের চলমান আন্দোলন কার্যকর হোক।’
এই সমাবেশে চা শ্রমিকদের পোশাক লুঙ্গি, তাদের ঢোল নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তারা। তাদের অন্যতম দাবী ছিল-‘দুটি পাতা, একটি কুঁড়ি, মজুরি চাই ১৫ কুড়ি।’
ওএফএস।
