সংস্কৃতিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাজের জন্য সম্মাননা পেলো ৯ প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের ৫০ বছরে সংস্কৃতিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত গবেষণা ও প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছে, বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে, এমন ৯টি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে সম্মাননা প্রদান করছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থা, থিয়েটার পত্রিকা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ছায়ানট, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, কেন্দ্রীয় কঁচি-কাচার মেলা, পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন ডা. সারওয়ার আলী, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পক্ষে শিল্পী আবুল বারক আলভী, উদীচীর পক্ষে জামশেদ আনোয়ার তপন, ছায়ানটের পক্ষে লাইসা আহমেদ লিসা, থিয়েটার আর্কাইভসের পক্ষে ড. বাবুল বিশ্বাস, থিয়েটার বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘থিয়েটার’ এর পক্ষে খুরশীদ আলম, সিরাজগঞ্জ উত্তরণের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা রাহিলা বেগম ও আসিফা চৌধুরী, গ্রাম থিয়েটারের পক্ষে কামরুল হাসান প্রমুখ।
সম্মাননা প্রদানের আগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও ধারা বর্ণনা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে ও বরণ করেন উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে কে এম খালিদ বলেন, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় এদেশের সংস্কৃতির জগতে অতিপ্রিয় একটি জাগরণমূলক নাম। দেশের সংস্কৃতির প্রতি যেসব মানুষ ও প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় তাদের সম্মাননা জানিয়েছে। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। আগামীতে এই উৎসব আরও বড় পরিসরে হবে এই আশা রাখছি। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এমন উৎসবই আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। এই দলের মতো আরও কয়েকটি দল যদি এভাবে এগিয়ে আসে তাহলে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারবো।
সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, আজকে দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার চালিকাশক্তি তরুণ প্রজন্ম, আমরা যাদের জন্য যুদ্ধ করেছি। পঞ্চাশ বছর পরে এই প্রজন্মের কাছেই স্বাধীনতা সম্পর্কিত দিনগুলি নিছক ছুটির দিন হয়ে যাওয়ার কথা; সময়টা শুধুই বিশ্রামের হওয়ার কথা। কিন্তু সংস্কৃতির কল্যাণে মার্চ বা ডিসেম্বর এলেই আমরা পত্রিকা এবং টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা উঠে আসতে দেখি। আমাদের তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানান আয়োজন দেখি, যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। এটি অনেক বড় প্রাপ্তির।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, আমরা যারা সংস্কৃতিকর্মী তারা কিছু পাওয়ার আশায় কাজ করি না। কিন্তু দেশ বা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যখন স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেটা আক্ষরিক অর্থেই আনন্দের। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালিয়ানার চর্চা করি। কেউ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে, কেউ গানের মধ্য দিয়ে আবার কেউ নাটকের মধ্য দিয়ে। সেই জায়গা থেকে আজকের আয়োজন স্বার্থক। সত্যিকার অর্থেই এই প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।
সম্মাননা প্রদান শেষে মঞ্চায়িত হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক মহাপ্রয়ানের শোক আখ্যান ‘শ্রাবণ ট্রাজেডি’। আনন জামানের রচনায় নাটকটির পরিকল্পনা করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন আশিক রহমান লিয়ন।