লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মেলা
বইমেলাতে দীপু মাহমুদের নানা স্বাদের বই
গেল বইমেলা তেমন জমেনি। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন প্রকাশক ও লেখকরা। এবারের মেলা নিয়ে তারা আশায় বুক বেঁধেছেন। টাকা ওঠেনি গতবারে। নতুন বই করতে পারেননি অনেক প্রকাশক। নামকরা সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের দিকে তারা তাকিয়ে আছেন।
বাংলাদেশের বরেণ্য এই মানুষগুলো যেভাবে পারছেন, সাহায্য করছেন বইমেলাকে। বক্তব্য দিচ্ছেন, লেখকদের লেখা প্রকাশ করছেন। আশায় আছেন বাঙালির প্রাণের মেলা, বাংলাদেশের গর্বের একুশের বইমেলা জমে উঠবে। লেখকদের হাতে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ কেমন, সেটি কেবল তারাই জানেন। নতুন কোনো বই কিনলে তাদের খুব ভালো লাগে। পাঠকের সঙ্গে সম্মিলনের, ভালোবাসার বইয়ের ভুবনে ঘুরে বেড়ানোর এই সুযোগগুলো কোনোভাবেই হারাতে চান না। তেমন লেখক আছেন, যারা খুব কষ্ট করে লিখে চলেছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। তুলে আনছেন বিখ্যাতদের জীবন, তুমুল কোনো সময়, ইতিহাসের আর্তনাদ, ভালোবাসার ভুবন। কেবল চাওয়া-একটি মননশীল, রুচিময় বিশ্ব হোক বাংলাদেশে। সেই ভুবনটি আছে বইমেলাতে। এক মাসের জন্য আসে আবার চলে যায়। মেলায় তেমন একজন দীপু মাহমুদের বই আছে। তিনি লেখক হিসেবে সাড়া ফেলা কোনো লোক কী? অনেক। এবার তিনি চমকে দিয়েছেন।
ড. দীপু মাহমুদ। লেখাপড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, উচ্চতম পাঠ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচডি যুক্তরাষ্ট্রে। এই মেলাতে তিনি একাই ১শ। অনেকগুলো বই নিয়ে হাজির হয়েছেন, অনেক কষ্ট সহ্য করে লিখেছেন প্রধানত শিশু-কিশোরদের জন্য।
দীপু মাহমুদের ২০২২ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আছে মোট ১২টি বই। মেলা যদি একমাস চলে তাহলে তার আর ভাবনা নেই। পাঠকদেরও ভাবনা নেই, ভালোবাসবেন তারা দীপুর উপন্যাসগুলো। লিখেছেন তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, তাদের জন্য বই তো কম। তাই লেখা ‘বেব্রোর্ন রোড (পার্ল)’। তুলে এনেছেন গভীর অভিনিবেশ ও খুব কষ্ট সহ্য করে ইতিহাসের বিখ্যাত নানকার বিদ্রোহ।
ইতিহাসের বিখ্যাত এই বিদ্রোহের কারণ ভূমিদাস প্রথা। জমিদারদের বিপক্ষে তুমুল রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে নানকার প্রথাকে উচ্ছেদ করেছেন বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ। তাদের কমরেড অজয় ভট্টচাযের বিখ্যাত বই-নানকার বিদ্রোহ। নতুন করে আলোচনার সূচনা করবে নিশ্চয়, উপন্যাস হিসেবে তুলে আনা এই দীর্ঘসংগ্রামের কাহিনীকে দীপু মাহমুদের ‘নানকার (পার্ল)’।
মিশরের ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন তিনি ফারাওদের ভুবন আর পিরামিডের দেশে; প্রকাশিত নাম ‘মিশরের ডায়েরি (কথাপ্রকাশ)’। এই দিনলিপি পড়তে ভালো লাগবে। কিশোর উপন্যাস তো লেখা হয়। কিশোর সায়েন্স ফিকশন? হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রফেসর শঙ্কু’ বাদে? দীপু মাহমুদ লিখেছেন ‘ফোর ফিফটি টু বি’, কিংবদন্তী থেকে প্রকাশ। আরেকটি আছে ‘মেগালো’, পদক্ষেপের। অন্যটি হলো তাদের থ্রিলার সায়েন্স ফিকশন-‘হারাকিরি’; অনিন্দ্যর বইটি নতুন ধারা। পড়তে কেমন? সায়েন্স ফিকশনের গল্পগুলো তিনি রেখেছেন সেবার আদলে ‘ন্যানিন’ নামে, সময় থেকে। ওদের ভুবনে ডুব দিয়েছেন সায়েন্স ফিকশন গল্পমালা নিয়ে-‘থ্রি, টু থ্রি’ নামে। প্রকাশক সময় চন্দ্রদীপ। মুক্তিযুদ্ধের গল্প কী কখনো ভোলা যায়? কিশোর টিটুর স্বাধীনতার যুদ্ধ?
নাসির উদ্দিন ইউসুফের দলের ছেলেটিকে তিনি লিখেছেন একটি মাত্র বই-টিটুর স্বাধীনতা। দীপু মাহমুদ বই করেছেন কিশোরদের গল্প নিয়ে ‘সময়ে ফেরা’, প্রকাশনী ছোটবেলার জেলার কুষ্টিয়া প্রকাশন। ‘অবাক পাথর’ হলো তার কিশোরদের অদ্ভুত গল্পমালা, আছে পার্লে। তবে তাকে সবচেয়ে ধন্যবাদ দিতে হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিশোরীদের অবদানের ওপর তেমন কোনো লেখাই নেই, বই তো নেই-ই। পূর্ণবয়স্ক মানে ১৮ থেকে তার চেয়ে কম বয়সী কিশোরী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি অসাধারণ বই করেছেন তিনি, গবেষণাধর্মী বইটিতে আছেন মোট ৫০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বদেশ পেয়েছি। নাম ‘সম্মুখ সমরে কিশোরী মুক্তিযোদ্ধা’।
পার্ল পাবলিকেশনের অনন্য গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর ইতিহাসকে ধরে রেখেছে। তিনি অধ্যাপকের ছেলে, শিক্ষায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও বিদ্যা আছে। এখন আছেন ইউনিসেফে। লিখতে বড় ভালো লাগে-১শটি বই লিখে ফেলেছেন। পেয়েছেন শিশু-কিশোরদের জন্য লিখে-অগ্রণী ব্যাংক, নুরুল কাদের, মোহাম্মদ খালেদ, নাসির আলী, আনন্দ আলো, সায়েন্স ফিকশন ইত্যাদি পুরস্কার।
ওএস/