লতার সামনে সাবিনা গেয়েছিলেন ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাংলাদেশের নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের মধুর স্মৃতি রয়েছে। ৪৩ বছর আগে তাদের দেখা হয়েছিল। গান শুনিয়েছিলেন, কথা বলেছিলেন, ছবিও তুলেছিলেন।
লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণের দিনে সেদিনের স্মৃতিচারণ করলেন সাবিনা ইয়াসমীন। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে বাংলাদেশের একটি দল দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতায় গিয়েছিল। সেই দলে ছিলেন চলচ্চিত্র তারকা ও সঙ্গীতশিল্পীরা। সাবিনা ইয়াসমীন ছাড়াও ছিলেন ববিতা, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, কাজী জহির প্রমুখ। মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত উৎসবের ফাঁকে একটি পার্টিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল সাবিনা ইয়াসমীনের।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ফাঁকে মুম্বাইয়ের একটা অনুষ্ঠানে গাইছিলাম। কিছুই ছিল না, কোনো মিউজিশিয়ান ছিল না, শুধু হারমোনিয়াম নিয়ে গাইছিলাম। ওই পার্টিতে সে দেশের বড় বড় প্রযোজকরা ছিলেন। অমিতাভ বচ্চন, রাজ কাপুর এরা ছিলেন। আরও ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণ। তিনি বললেন, মা, তুমি বাংলাদেশের একটা গান শোনাও। তখন আমি ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা’ গেয়েছিলাম। তিনি মাথা নিচু করে শুনছিলেন। মাথা তুলতেই দেখলাম, তাঁর দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আরেকটা গান গাইতে শুরু করেছি, দেখি করিডরের ওদিক দিয়ে লতাজি ঢুকছেন! লতাজিকে দেখে হারমোনিয়াম ফেলে দৌড়ে পালাই। আমাকে তো আর কেউ খুঁজে পায় না। ভয়ের চোটে আমার জীবন শেষ, ওরে বাপ রে বাপ! ওনার সামনে গান গাইব আমি! কিন্তু উপায় তো নেই। গাইতেই হলো।’
সাবিনা ইয়াসমীন জানান, তিনি গেয়েছিলেন ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’ গানটি। গান শেষ হওয়ার পর লতাজি এমন প্রশংসা করছিলেন, রীতি মতো লজ্জাই পেয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমীনের গলার প্রশংসা, গায়কির প্রশংসা করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘অনুষ্ঠান শেষে শচীন দেব বর্মণ আমাকে আর লতাজিকে দুই পাশে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে তিনটি ছবি তুললেন। এর মধ্যে শুধু দুজনের একটা ছবি আমার কাছে আছে, বাকি দুটি ছবি আর পাইনি। ছবি তোলার ফাঁকে কথাবার্তা হলো। লতাজি জানালেন, বাংলা গান গাইতে খুব ভালোবাসেন। বাংলা ভাষাটাকে নাকি তাঁর খুব মিষ্টি লাগে।’
লতা মঙ্গেশকরের এই স্মৃতি তাঁর ‘জীবনের বড় পাওয়া’ বলে মনে করেন সাবিনা ইয়াসমীন।
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘লতাজির প্রস্থান অপূরণীয় ক্ষতি বললেও কম হবে। কী বলে যে তাঁর চলে যাওয়াটা ব্যাখ্যা করব, তা মাথায় ধরছে না।’
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ৯২ বছর বয়সে রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মধ্য মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এপি/