বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পদত্যাগ
লিয়াকত আলী লাকী। ছবি: সংগৃহীত
সরকার পতনের পর পরিবর্তনের ধাক্কায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়লেন লিয়াকত আলী লাকী, যিনি ওই পদ আঁকড়ে ছিলেন এক যুগ ধরে। এত দীর্ঘ সময় এই দায়িত্বে থাকার নজির আর কারও নেই।
সোমবার (১২ আগস্ট) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। তিনি বলেন, লিয়াকত আলী লাকী হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
এর আগে গতকাল রবিবার দুপুরে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে ধাওয়া খেয়ে পালিেয়ে যান শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এসময় তার অনুগত কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
এ সময় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ডিজির অনুগত কর্মকর্তা মাসউদ সুমন ওরফে চাকলাদার সুমন, সালেহ, আসফ, মোস্তাক, মামুন ও হেলালসহ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। তবে ডিজি লিয়াকত আলী লাকী নিরাপদ দূরত্বে থাকাতে ছাত্র-জনতার হামলা থেকে তিনি এ যাত্রায় রক্ষা পান।
শিল্পকলা একাডেমির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলা একাডেমির ওই কর্মকর্তা বলেন, এ হামলাটা আরও আগেই হতো। সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপন থাকাতে এত দিন হামলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ বছর ধরে মহাপরিচালক হিসেবে থেকে সংস্কৃতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তার অন্যায় আবদার না মানার কারণে স্বৈরাচারের দোসর লিয়াকত আলী লাকী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত অনেককে শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাড়িয়ে দেন। অনুগত অযোগ্য, ধামাধরা ও তেলবাজদের যোগসাজশে সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর শিল্পকলা একাডেমিকে তিনি অন্যায়, লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করার জন্যই তিনি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য, লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মত তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এত দীর্ঘ সময় এই দায়িত্বে থাকার নজির আর কারো নেই।
দীর্ঘদিন ধরে লাকীর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ তৈরি হয়। দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তাকে।
লাকী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির পদেও রয়েছেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেশন ছাড়ে ঢাকা থিয়েটার।
গত বছরের জুনেও ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ' ব্যানারে লিয়াকত আলী লাকীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি অংশ। তখনও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন তিনি।