ঢাবিতে শেষ হলো দ্বিজ কানাইয়ের ‘মহুয়া’ পালা
সপ্তাহ ব্যাপী মঞ্চায়ন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শেষ হলো দ্বিজ কানাই রচিত ‘মহুয়া’ পালা। মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে ‘মহুয়া’ মৈমনসিংহ পালার মঞ্চায়ন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় চলে এই প্রদর্শনী। দ্বিজ কানাই রচিত ‘মহুয়া’ নির্দেশনা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রথিতযশা মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা রহমত আলী। এতে অভিনয় করছেন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। প্রতি সন্ধ্যা ৭টায় ঢাবি নাটমণ্ডলে এটি মঞ্চস্থ হয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। এ সময় নীলফামারী ২ এর সংসদ সদস্য, অভিনেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত ছিলেন।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক রহমত আলী বলেন, মহুয়া পালা প্রযোজনাটি গীত-নৃত্য-বাদ্য সহযোগে আমাদের দেশজ পরিবেশনাশৈলী অনুসৃত এক নব্য সৃষ্টিকর্ম। আখ্যাননির্ভর এই পালাগানের প্রধান অংশই গান। নিছক সংগীতের প্রতি অনুরাগ নয় বরং হাজার বছরের চর্চিত, ঐতিহ্যবাহী শেকড়সন্ধানী এই অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশনাশৈলীর সঙ্গে নাগরিক জীবনের সংযোগ ঘটানো ও বিদ্যায়তনিক স্তরে শিক্ষার্থীদের এই রীতির পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই প্রযোজনার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য। তা ছাড়া নির্দেশক হিসেবে গীতিনাট্য আমাকে সর্বদা প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। পূর্বে আমার নির্দেশিত খাকসারনামা, তাসের দেশ, স্বদেশী নকশা প্রযোজনাসমূহ ছিল সংগীতাশ্রয়ী। পালাটির সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে, পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য ও ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক। রচয়িতা হিসেবে দ্বিজকানাইয়ের নাম পাওয়া যায়। আর রসের দিক থেকে এটি রোমান্টিক-ট্র্যাজেডি ঘরানার দৃশ্যকাব্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ প্রযোজনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের অভিনয়ে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। ‘মহুয়া’ পালায় অভিনয় করছেন ১৮ জন শিক্ষার্থী। তারা হলেন— আজরিনা শারমিন, অনন্যা দে, বর্ণালী ঘোষ বর্ণ, ফৌজিয়া আফরিন তিলু, জাহেদ আল ফুয়াদ, মারিয়া সুলতানা, মো. ফরহাদ হোসেন ফাহিম, মো. হাবিবুর রহমান কাঞ্চন, মো. মেজবাহুল ইসলাম জিম, মুনিরা মাহজাবিন, মুসাব্বির হুসাইন রিফাত, নীহারিকা নীরা, শান্তা আক্তার, শেখ রাহাতুল ইসলাম, শেখ মুমতারিণ অথৈ, তাহসিন নুর মিত্রিতা, টুম্পা রানী দাস, উম্মে হানী।
মহুয়ার কাহিনী গড়ে উঠেছে একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক প্রণয়কে কেন্দ্র করে। গারো পাহাড়ের জঙ্গলে বাস করা হুমরা বেদে একদিন কাঞ্চনপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছয় মাসের শিশু কন্যা চুরি করে এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কালে কালে ছয় মাসের সেই শিশু কন্যা ষোল বছরের অপরূপ সুন্দরী যুবতীতে পরিণত হয়। নাম দেওয়া হয় মহুয়া সুন্দরী।
এসএন