ফকির আলমগীরকে ছাড়াই প্রথমবার পালিত হলো ঋষিজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
ঋষিজ আর ফকির আলমগীর যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। এরই মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ বছরের ২৩ জুলাই তিনি চিরতরে মিশে গেছেন তার প্রিয় বাংলার মাটিতে। তাঁকে ছাড়াই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ঋষিজের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
প্রতি বছরের ন্যায় গুণীজন সংবর্ধনা, গান আর কথামালায় মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) উদ্যাপন করা হয় ঋষিজের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঋষিজ পদক প্রদান করা হয়। এবার সংবর্ধিত ব্যক্তিত্বরা হলেন জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সঙ্গীতশিল্পী শাহীন সামাদ ও ফেরদৌস ওয়াহিদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ফকির আলমগীরের সহধর্মিণী বেগম সুরাইয়া আলমগীর। ঋষিজ শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর শিল্পীরা পরিবেশন করেন শিল্পী ফকির আলমগীরের সুরে ‘এই সূর্যের উদয় পথ’ গানটি।
এরপর শুরু হয় গুণীজন সংবর্ধনা। কবি নূরুল হুদা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার পক্ষে অন্য একজন এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘ঋষিজ’ ফকির আলমগীরের প্রাণের সংগঠন। তিনি ৪৫ বছর ধরে সংগঠনটিতে প্রাণের সঞ্চার করেন। বাংলা গণসঙ্গীতের ক্রমাগত আধুনিকায়নের ধারাকে বজায় রেখে সংগঠনটি প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে চলেছে অপসংস্কৃতির বাধার প্রাচীর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় দুর্যোগে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই সংগঠন সব সময় সোচ্চার থেকেছে। সকল বৈপরীত্য ঠেলে ঋষিজ যখন পূর্ণ করছে তার পথচলার ৪৫টি বছর, সেই মুহূর্তে আমরা হারালাম আমাদের অভিভাবক, সংগঠনটির প্রাণপুরুষ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফকির আলমগীরকে। অকস্মাৎ এ চলে যাওয়াকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। অকুতোভয় নির্ভীক, লৌহকঠিন স্বাধীনচেতা এ মানুষ গণসঙ্গীতের নিবেদিত মুকুটহীন সম্রাট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন মানবতার কল্যাণে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, পঞ্চভাস্বর, ক্রান্তি, আনন্দনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। আবৃত্তি করেন ঝর্ণা সরকার ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু। নৃত্য পরিবেশনায় ছিল স্পন্দন। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আফরোজা কণা ও ফকির সিরাজ।