অলচিকি লিপিতে সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবি
সাঁওতালি ভাষার লিপি বিতর্কের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে অলচিকি লিপিতে ভারতের ন্যায় বাংলাদেশেও সাঁওতালদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বিশিষ্টজনরা। সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে সাঁওতালি ভাষার ভবিষ্যৎ ও করনীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলন কক্ষে আদিবাসী ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশন এবং সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির যৌথ উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক গনেশ মার্ডির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির সুবাস মুরমু, আদিবাসী ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মানিক সরেন, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, রিপন মুর্মু, কর্নেলিউস মার্ডী, রাজেন হেমব্রম, আদিবাসী নারী নেত্রী জলিতা কিস্কু, সোনাবাবু হেমব্রম, নৃত্যশিল্পী সাবিত্রী হেমব্রম, শিবলাল টুডু প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ভাষা হচ্ছে সাঁওতালি ভাষা এবং বর্তমান বাংলাদেশের কথ্য ভাষার মধ্যে সম্ভবত তৃতীয় বৃহৎ ভাষা। সাঁওতালি ভাষার অনেক কিছু নিয়ে এই উপমহাদেশের অনেক ভাষা আজ সমৃদ্ধ হয়েছে। এক সময় সাঁওতালি ভাষার কোনো বর্ণমালা না থাকলেও ১৯২৫ সালে সাঁওতাল পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু এই ভাষার জন্য অলচিকি লিপি আবিস্কার করেন। বর্তমানে এই লিপিটি দিয়ে পৃথিবীর সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ সাহিত্য চর্চা করে আসছে। এই অলচিকি লিপি ব্যবহার করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইনমুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার ভার্সনও চালু হয়েছে। ২০০৮ সালের এপ্রিলে অলচিকি বিশ্বের প্রচলিত লিপিসমূহের তালিকা ইউনিকোড কনসর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিশ্বের অন্যতম লিপি হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং বর্তমানে অলচিকি বর্ণমালা ব্যবহার করে সাঁওতালি ভাষায় ভারতে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা দান কার্যক্রম চালু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের সংবিধানের শততম সংশোধনীতে সাঁওতালি ভাষা ৮ম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়। সাঁওতালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় এই দিনটিকে সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস হিসেবে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ ও নেপালের সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষেরাও পালন করে আসছে।
এপি/এসআইএইচ