বই পড়ে বড় হও
আমি মনে করি, বই আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। বইকে দূরে সরিয়ে রাখলে বেঁচে থাকার সুন্দর জায়গাটুকু নষ্ট হয়। বই দিবসকে সব মানুষ আপন জ্ঞানের জায়গা থেকে উদযাপন করবে, শিশুদের মাঝে বই পৌঁছে দিয়ে বলবে, বই পড়ে বড় হও। সুতরাং সামগ্রিক অর্থে বই দিবস আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপুর্ণ দিবস। শুধু উৎসব দিবস বলে এই দিবসকে আমরা ধারণ করতে পারি না। বইকে সঙ্গে করে নিজেদেরকে আলোকিত করা, বই দিবসের আরেকটি দিক। যে দিবসটি মানুষের সামনে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। মানুষকে মানবিক করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
বই ছাড়া বড় হওয়া যায় না। বাবা-মা সবাই মিলে শিশুদের সামনে বই দিয়ে তাদেরকে বড় হওয়ার মৌলিক জায়গাটি ধারণ করার চিন্তা চেতনায় ভরপুর করবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বই দিবস উদযাপিত হলে বিভিন্ন ধরণের বই সবার কাছে পৌঁছাতে পারে। যে ব্যক্তি সব বইয়ের খোঁজ পায় না, তিনিও সব বইয়ের খোঁজ পেতে পারেন এবং বই দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে নিজের চেতনার জায়গাটি আলোকিত করতে পারেন।
আমি মনে করি, বই দিবস একটি গুরুত্বপুর্ণ দিন। যে দিনটি ধারণ করে, মানুষ তার মানবিকবোধকে প্রসারিত করবে। চিন্তা চেতনাকে প্রসারিত করবে। নিজেকে বৃহত্তর জায়গায় নিয়ে যাবে । মূলত এর মধ্য দিয়েই মানুষ নিজের মানবিক মর্যাদাকে গুরুত্বপুর্ণ করে তুলবে। সুতরাং বই দিবস হোক আমাদের জন্য বিশাল দিবস। যে দিবসকে ধারণ করে আমরা অগ্রগামী ভূমিকায় নিজেদের দেখবো। নিজেদের জীবনকে সত্য সুন্দর এবং মর্যাদার পথে পরিচালিত করবো। সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলে একটি প্রচণ্ড ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকবো। যে ব্যবস্থাপনা খারাপ কাজ করার জায়গাটিকে কোনভাবেই সমর্থন দিবে না। এভাবেই বই দিবসের মর্যাদা হোক আমাদের সামনে। বই দিবস স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল হোক।
আরও একটি বিষয় আমি যুক্ত করতে চাই। বাংলাদেশের বই সারা পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। দেশের বই বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য হলো, আমাদের বইয়ের বিস্তারণ সেভাবে এখনও শুরু হয়নি। যেটুকুই হয়েছে তা মুলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে। ব্যাপক অর্থে বিস্তারণ এখনও সেভাবে চোখে পড়ে না। আমি মনে করি, সেটি হওয়া উচিত। বইকে গণ্ডিবদ্ধভাবে অথবা নির্দিষ্ট বলয়ে চিন্তা করার কোন উপায় নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে বই সার্বজনীন এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অনুষঙ্গ।
কাজেই আমি মনে করি, বই দিবসে আমার এটুকুই চাওয়া থাকবে, আমরা যখন অন্যদেশের বই পড়বো, কারণ আমরা সবাই জানি, বইয়ের কোন সীমান্ত নেই। যেকোন সময়, যেকোন বই, যেকোন দেশ থেকেই গ্রহণ করা যায়। পাঠ করা যায়। সুতরাং আমরা চাই, আমাদের দেশের বইও বিদেশে যাবে। বিদেশের পাঠকরা আমাদের বই পড়ে জানবে বাঙ্গালীর জাতিসত্ত্বার বিকাশ, বাঙ্গালীর জীবন যাপন, বাঙ্গালীর সবকিছু। এইসব নিয়ে বই দিবসের মর্যাদায় বাংলাদেশ যদি বড় যাত্রা করে, তাহলে এটি হবে আমাদের জন্য শুভ পথের যাত্রার একটি গৌরবময় দিক।
লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাহিত্যিক