মানুষের মঙ্গল কামনা ও কুগ্রহের ধ্বংস কামনা
নববর্ষের সর্বত্র মঙ্গল শোভাযাত্রা। মানুষের মঙ্গল কামনা ও কুগ্রহের ধ্বংস কামনার একটি সুদীর্ঘ শোভাযাত্রা বিভিন্ন জনপদে মানুষকে জাগ্রত করে। দৃশ্যত: এইসব আয়োজন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক এবং উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করলেও এর গুঢ় অর্থ দুটি। একটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষ নতুন করে নববর্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়। দুই কৃষিনির্ভর বাংলায় উৎপাদনের সাথে জনজীবন সম্পৃক্ত হয়ে বাংলা সালকে স্মরণ করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কৃষক ও মহাজনের কাছে কৃষি অর্থনীতিটাও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যদিও আজকের দিনে কৃষক ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে নি:স্ব হবার প্রক্রিয়ায় চলছে। গ্রামীণ মহাজনের চরিত্র পাল্টে গিয়ে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে তবুও বাংলার মেরুদণ্ড কৃষকরাই ধরে রেখেছে।
এই পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠিকতার উৎসবের মধ্যে দেশের অর্থনীতির একটা হিসাব-নিকাশও হওয়া উচিত। বিপুল পরিমান কৃষি শ্রমিক গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামে এখন কৃষি শ্রমিকের বড়ই অভাব। অভাব এমন এক পর্যাযে এসেছে যে অনেক জায়গায়ই কৃষি কাজ লাভজনক তো দূরের কথা নিজেদের জীবন যাপনের জন্যেও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও জীবন ব্যবস্থা হিসবে কিছু কৃষক বুকের পাজরভাঙ্গা পরিশ্রম দিয়ে কৃষিকে রক্ষা করছে। তাদের উৎপাদিত খাদ্য দিয়েই আমরা জীবন ধারন করছি। বিপুল পরিমান কৃষি জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, কলকারখানা, নির্মাণ, রিসোর্ট ইত্যাদির নামে। যেখানে কলকারখানার জন্যে উর্বর জমির প্রয়োজন নেই কিছু অদূরদর্শী কারখানার মালিক সেসব জায়গায় কারখানা স্থাপন করে উর্বর জমিকে বিনষ্ট করে ফেলছে। অস্থিমজ্জায়, অন্তরে পহেলা বৈশাখকে চেতনায় ধারন করাই হবে আমাদের মুখ্য কর্তব্য। যে আনন্দে আমাদের পহেলা বৈশাখে জাগরন হয় সেই আনন্দ যেন আমরা সারা বছরই বাংলাকে কেন্দ্র করে উদযাপন করি।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব