নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক উৎসব
আমি মনে করি নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক উৎসব। আমাদের বাঙালি সম্প্রীতির উৎসবটিকে আমরা নতুন করে উদযাপন করি, আবিষ্কার করি এবং সবাই আমরা শৈশবে কৈশোরে ফিরে যেতে চাই। আমরা যেহেতু গ্রাম থেকে এসেছি, সুতরাং সেইসব গ্রামীণ জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলায় কি সব করতাম, সেইসব দিনের কথা মনে হয়। ছেলেবেলার সেই আনন্দময় দিনগুলির কথা মনে করে আমরা এখনও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আমরা আমাদের নাগরিক জীবনে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেইসব স্মৃতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারছি। আমি মনে করি সেটি একটি বড় বিষয়।
নববর্ষ আমাদের জাতীয় উৎসব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা এই উৎসব পালন করে থাকি। এটি কোন ধর্মীয় উৎসব নয়। এর সাথে ধর্মের কোন বিভেদ বা বৈষম্য নেই। আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে একে অন্যের সঙ্গে মিলি এবং নতুন বছরকে উদযাপন করি। পৃথিবীর সকল দেশই নতুন বছরকে নিজেদের মত করে উদযাপন করে। আমরাও আমাদের মত করে উদযাপন করি। সুতরাং আমি বলব, যারা এটিকে সাম্প্রদায়িক দৃস্তিভঙ্গি থেকে কালিমালিপ্ত করতে চায়, তাদেরকে প্রতিহত করা,সকল মুক্তমনা সুস্থ্যমনা বাঙ্গালির জন্য উচিত বলে আমি মনে করি।
আমি একটি কথা এক্ষেত্রে বলতে চাই। সত্য হলো, প্রতিটি ধর্মই কিন্তু জীবনকে ধারণ করে। শান্তি ও সুন্দরের কথা বলে। সমস্যাটি হয় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ যখন হয়। যখন মতভেদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যেসকল ঘটনা দেশে ঘটছে, এসব দেখে তখন আশাভঙ্গ হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ অর্জিত হোক আমরা চাইনি। যেখানে একজন বিজ্ঞান শিক্ষক, যিনি ছাত্রদের বিজ্ঞান পড়াতেন, তাকে নানা শিক্ষাবানে জর্জরিত করা হবে। তাঁর কথার ভুল ব্যখ্যা দেওয়া হবে। তিনি কি বলছিলেন? তিনি বলেছেন, বিজ্ঞান হচ্ছে প্রমাণ নির্ভর। ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস নির্ভর। যারা এসব ঘটনা ঘটালো, মোবাইলে যারা ধারণ করল, যারা চক্রান্ত করল, তাদের কোন বিচার হলো না। বরং যে নির্যাতিত হল, একজন শিক্ষক। তাকে জেলে যেতে হয়েছে। একইভাবে আরও দুই তিনটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলি সবাই জানেন। সুতরাং আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যারা এসব ঘটাচ্ছে, যারা সাম্প্রদায়িক চরিত্র নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কেন কঠোর অবস্থা গ্রহণ করে না? এটিই আমাদের প্রশ্ন।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি অসম্প্রদায়িক দেশ। বঙ্গবন্ধুর সপ্ন ছিল সোনার বাংলা যেখানে, দেশের সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষ এক ও একাত্ম হয়ে বসবাস করবে। মানুষে মানুষে মানবিক সদাচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সাম্প্রদায়িকতা নামক যে বিষফোঁড়া চিরকালের বাঙালি জাতির শিল্প সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি মুক্ত একটি দেশের সপ্ন ছিল। আমরা মুক্তিকামি মানুষও সকল মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারি। চারপাশের অবস্থা দেখে হতাশ না হয়ে আমরা পারি না। এমন দেশ আমরা চাইনি।
কাজেই আমি এটিই আশা করবো যে, ১৪২৯ যে নতুন বছর আসছে, এই নতুন বছরের বার্তা হচ্ছে, আমরা একটি অসম্প্রদায়িক দেশের নাগরিক হিসেবে স্বস্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারি এবং বিগত বছরে যেসব অনাহূত ঘটনা ঘটেছে সেগুলির যেন পুনরাবৃত্তি আর কখনও না ঘটে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে সে ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব