হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে পথনাটক পরিষেদের প্রতিবাদ সমাবেশ
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ।
শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, লেখক মফিদুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সহ-সভাপতি অনন্ত হীরা, সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজারুল ইসলাম সুইট, অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান, অভিনয় শিল্পী ঝুনা চৌধুরী, আখতারুজ্জামান, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ গিয়াস, নাট্যজন ড. মুহাম্মদ বারি ও গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিন। সঞ্চালনা করেন আখতারুজ্জামান। প্রতিবাদ সমাবেশের সংহতি প্রকাশ করে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, কবি ও আবৃত্তিশিল্পী অনিকেত রাজেশ।
মামুনুর রশীদ বলেন, সারাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে, সবাই বসে আছে নিয়োগ দিয়ে ভাগবাটোয়ারা নেবে। আর এই ভাগবাটোয়ারার বলি হচ্ছেন হৃদয় মণ্ডলের মতো শিক্ষকরা। হৃদয় মণ্ডলকে আমরা হৃদয়কে ধারণ করব। তার জন্য লড়াই করব।
মফিদুল হক বলেন, ‘একটি গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একের পর এক মিথ্যাচার করে, বক্তব্য বিকৃত করে জাতিকে বিভ্রান্তির মাধ্যমে জাতির মূল সত্ত্বাকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যারা ব্যবহার করেছে তারা আড়ালে থেকে গেছে। হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করে জেলে পাঠানো জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এটা ধর্মের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র। ধর্ম মানে এই নয়, কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করে অন্যকে আঘাত করবেন, ঘৃণা ছড়াবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ধর্মকে ব্যবহার করে স্বাধীনতার বিরোধীতা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ দেশে বিদ্যুতের আলো ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছে। কিন্তু ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো পৌছাতে পারেনি। সংস্কৃতির ছোঁয়া পৌঁছাতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল এমন কোনো কথা বলেননি যা জ্ঞানের কথার বাইরে, শিক্ষার বাইরে। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে সম্মানে মুক্তি দিয়ে একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান।’
গোলম কুদ্দুছ বলেন, সেই ১৯৬২ সাল থেকে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনীন শিক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়নি। এখন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ কিংবা নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের হিজাব পরার দায়ে ছাত্রীকে পেটানোর অভিযোগ সবই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। কুচক্রীরা কোনোভাবে কিছু করতে না পেরে ধর্মকে ব্যবহার করে বিশেষ পরিস্থিতির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকালে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষক কারাগারে রয়েছেন। দুই বার জামিন চাওয়া হলেও মুক্তি পাননি।
এপি/