বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তির দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ
‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে হেনস্তার প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। সমাবেশ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িকাতার প্রতিরোধ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জমশেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, নাট্যকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, উদীচী’র সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সঙ্গীতা ইমাম, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষক অমুল্য কুমার বৈদ্য, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, সহ-সভাপতি অনিক রায়, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সংগঠক অভিজিৎ রায় রঘু ও উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূর।
বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মৌলবাদী আগ্রাসন এখন এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, মুক্ত চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, বাউলারা প্রাণ খোলে গান গাইতে পারছেন না, লেখকরা লিখতে পারছেন না। বিজ্ঞানের সত্যকে প্রচার করার কারণে একজন শিক্ষককে কারাগারে যেতে হচ্ছে। দেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। অবিলম্বে হৃদয় মন্ডলকে মুক্তি দিতে হবে। তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক এ এন রাশেদা বলেন, ‘শিক্ষক হৃদয় মন্ডল তার ক্লাসে সত্য সুন্দরের কথা বলেছেন। কিন্তু তাকে সাম্প্রদায়িক চক্রান্তে জেলে পাঠানো হয়েছে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জাগরণ চাই, বিবেকের জাগরণ চাই। বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘এই স্বদেশ মুক্তিযুদ্ধে অর্জত স্বদেশ, এই স্বদেশ বাহাত্তরের সংবিধানের স্বদেশ, ধর্মনিরপেক্ষতার স্বদেশ। কিন্তু আজ উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। এই স্বদেশ আমরা চাই না।’
‘মানব না এই বন্ধনে, মানব না এই শৃঙ্খলে/মুক্ত মানুষের স্বাধীনতা অধিকার খর্ব করে যারা ঘৃণ্য কৌশলে’ ও ‘অধিকার কেড়ে নিতে হয়/অধিকার লড়ে নিতে হয়’ গণসংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এই প্রতিবাদী আয়োজন। আবৃত্তি করেন শিখা সেন গুপ্ত।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকালে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষক কারাগারে রয়েছেন। দুই বার জামিন চাওয়া হলেও মুক্তি পাননি।
এপি/