৯০ বছরে পা রাখলেন সন্জীদা খাতুন
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনের আজ জন্মদিন। তিনি ৯০ বছরে পা রেখেছেন। সংগীতজ্ঞ, সংগঠক, লেখক, গবেষক, শিক্ষক হিসেবে তিনি অনন্য কৃতীর অধিকারী। তার এই বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
সন্জীদা খাতুন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমান সভাপতি। এ ছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার সভাপতি তিনি।
এই বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তার পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক। কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী সন্জীদা খাতুন।
সন্জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন।
সন্জীদা খাতুন জীবনের প্রায় শুরু থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুকুল ফৌজেও কাজ করেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তিনি ছিলেন তার অন্যতম ভূমিকায়।
ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সন্জীদা খাতুন। সংগঠনটি দেশে একটি মানবিক বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করে চলেছে। ১৯৬৭ সালে ছায়ানট পয়লা বৈশাখে নববর্ষবরণের যে প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, তা আজ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখন সভাপতি হিসেবে ছায়ানটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সন্জীদা খাতুন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। এছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।
সন্জীদা খাতুন ৪০টির বেশি বই লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, অতীত দিনের স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, জননী জন্মভূমি ও রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ।
সন্জীদা খাতুনের লেখা বই, তার গান বা সব সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত করেছে, শক্তিশালী করেছে। এজন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ থাকবে তার কাছে।
এসএ/