দুই বছর পর হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখোশ ও ভুভুজেলা নিষিদ্ধ
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। করোনা মহামারির কারণে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা পূর্ণমাত্রায় অনুষ্ঠিত হতে না পারলেও, এবার পূর্ণ আবহেই অনুষ্ঠিত হবে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরা ও ব্যাগ বহন করা যাবে না এবং ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে আজ রবিবার (৩ এপ্রিল) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সভায় এই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং মেট্রোরেলের চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য চলাচলের ক্ষেত্রে সতকর্তা অবলম্বন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোন ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিবর্গ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। সভায় নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৭-সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
সভায়, কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে ২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- শৃংখলা উপ-কমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটি। ১২ সদস্যবিশিষ্ট শৃংখলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং সদস্য-সচিব সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম। ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং সদস্য-সচিব সহকারী প্রক্টর মো: নাজির হোসেন খান।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং লকডাউনের কারণে গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছিল। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেবার এই আয়োজন চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ ছিল।
এর আগে ২০২০ সালের বাংলা নববর্ষ-১৪২৭ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রার সব অনুষ্ঠান স্থগিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। ফলে দুই বছর পর এবার ১৪ এপ্রিল হবে এই শোভাযাত্রা।
এপি