বিশিষ্টজনদের মূল্যায়ন
হাসান আরিফ তরুণদের মধ্যে আলো প্রজ্জ্বালিত করেছিলেন
অকাল প্রয়াত খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফকে বিদায় জানানো হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিশিষ্টজনরা মূল্যায়ন করেছেন দেশের সাংস্কৃতিক ও অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলনের এই অগ্রসেনানীর প্রতি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি বলেন, ‘আরিফ ভাইয়ের গলাটাও আমার কানে বাজছে। এখন আমরা যে সাম্প্রাদায়িকতার বিরুদ্ধে, অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, সেই যুদ্ধে তো হাসান আরিফ সব সময়ই সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। সেই মানুষটার হারিয়ে যাওয়াটা, চলে যাওয়াটা নিশ্চয়ই সবার জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। হাসান আরিফ যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। আর তিনি আমাদের মাঝে তো থাকবেনই। অসম্ভব সৃজনশীল একজন মানুষ ছিলেন তিনি। অনেকের জন্য তিনি অনুপ্রেরণারও জায়গা ছিলেন।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, হাসান আরিফ আবৃত্তিশিল্পী ছিলেন। তিনি আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেছেন। সারাদেশের সংস্কৃতি চর্চায়, বিশেষ করে কবিতা চর্চা, কবিতা আবৃত্তিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান ছিল। দেশের গড় আয়ু ৭৩ বছরের বেশি। সে হিসেবে তার আরও অনেক বছর বেঁচে থাকার কথা ছিল। তিনি অকালে আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন। নিঃসন্দেহে তার এ মৃত্যু আমাদের সংস্কৃতি আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা তার চলে যাওয়ায় শোকাহত। তার চলে যাওয়ায় সংস্কৃতি আন্দোলনে যে অভাবের সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবার নয়। বর্তমানে যারা সংস্কৃতি চর্চা করেন তার রেখে যাওয়া কাজে তাদের হাল ধরতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে- আমরা যারা সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলাম তাদের মধ্যে হাসান আরিফ অন্যতম। তিনি একজন সৃষ্টিশীল সংগঠক ছিলেন। তার কণ্ঠ আবৃত্তিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। তিনি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, আরিফ ছাড়া সাংস্কৃতিক আন্দোলন আগের মতো থাকবে না। তাকে ছাড়া পথ চলা কঠিন হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা থেমে গেছে। কিন্তু আরিফের মতো তরুণ সংস্কৃতিকর্মীরা থেমে থাকেনি। তারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আরিফ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিল। সে স্বপ্নকে আমাদের বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, তিনি দেশের বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী ছিলেন। ব্যক্তিগত ভোগবিলাস আনন্দের কথা ভুলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাকে এত অল্প সময়ের মধ্যে বিদায় দিতে হবে আমরা কখনও ভাবিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ গঠনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তার কণ্ঠ দিয়ে সারাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছেন।’
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হাসান আরিফের ছোট বোন রাবেয়া রওশন তুলি বলেন, ‘আমার ভাইটি আর বজ্রকণ্ঠে আবৃত্তি করবে না। আমার স্বপ্নবাজ ভাই স্বপ্ন দেখেছিল করোনা থেকে ভালো হয়ে বঙ্গবন্ধুর বীরগাঁথা নিয়ে একশত আবৃত্তি শিল্পীর সমন্বয়ে একটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবে। দেশের আবৃত্তি শিল্পীদের কাছে আবেদন, তার সেই ইচ্ছাটি যেন পূরণ হয়।’
শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাসান আরিফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। গত বছরের ২ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন হাসান আরিফ। দীর্ঘ্ প্রায় চার মাসের অধিকাংশ সময় হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে এ দেশের সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সামনে থেকে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।
আরও পড়ুন : শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হাসান আরিফ
এপি/