দুই বছর পর রমনা বটমূলে ছায়ানটের নববর্ষ আবাহন
করোনা মাহামারির কারণে দুই বছর পর আবার রমনা বটমূলে নববর্ষ আবাহনের প্রস্তুতি নিয়েছে ছায়ানট। ‘নব আনন্দে জাগো’ এই প্রত্যয় নিয়ে এবার অনুষ্ঠিত হবে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
শনিবার (২ এপ্রিল) ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা, কোষাধ্যক্ষ ডা. সারওয়ার আলী, সহসভাপতি আতিউর রহমান ও খায়রুল আনাম শাকিল প্রমুখ।
‘নব আনন্দে জাগো’ এই শিরোনামের ব্যাখা দিয়ে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘এতো বড় একটা দুরাবস্থা (মহামারি) গেল সারা বিশ্বে। এরপরেই নতুন করে জাগ্রত হওয়ার আহবান। এই আহ্বানটাই প্রধান থাকবে। আনন্দের কথায় থাকবে, এই আনন্দ, এই নব জাগরণের আহ্বান থাকবে ।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মানবসমাজ আজ বৈশ্বিক মহামারী কোভিড উনিশের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আলোর পথের অভিযাত্রী। সরকারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ক্রমান্বয় পরিত্রাণ ঘটে চলেছে। তারই সমুজ্জ্বল প্রতিফলন এবারের অমর একুশের গ্রন্থমেলার সফল আয়োজন। আগের স্বস্তিতে ফিরবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা পদে পদে জয়ী করে তুলছে মানুষকে। পাশাপাশি মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে নতুন স্বাভাবিক পরিবেশে।’
লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ‘আগ্রাসী করোনাকে দমাতে প্রায় দুবছর আমরা গৃহবন্দি ছিলাম। এক বাস্তবিক মানবিক-সামাজিক-মানসিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়কাল। সব শেকল ভেঙে বিশ্বজুড়েই আজ নব আনন্দে জেগে উঠবার আহ্বান। তার ভেতর আমাদের মূল প্রেরণা হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের বইমেলা আয়োজনে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। অনুপ্রাণিত ছায়ানট নবোদ্যমে রমনার বটমূলে বাংলার নববর্ষকে আবাহন জানানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘করোনাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবং রাষ্ট্রীয়-বিধান মান্য করে ছায়ানট দুবছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান স্বল্প পরিসরে অন-লাইনে আয়োজন করেছে। এমন কি, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিককে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সাজানোর সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হই, শ্রদ্ধা জানিয়েছি কেবল অন-লাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাঙালির অস্তিত্ব নিয়ে পাকিস্তানের চোখ রাঙানির মধ্যে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হবার পর, এর আগে কেবল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তাতে ছেদ পড়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশ দিয়ে বাংলা সুরবাণীতে বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয়-ক্ষণে ছায়ানট আয়োজিত এই বর্ষবরণ উৎসবকে প্রথম জাতীয় মর্যাদা দেন বঙ্গবন্ধু। যে মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারও। বাংলা বর্ষববরণ এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্ববাঙালির প্রধান প্রাণের উৎসব, বাঙালি ঐতিহ্যের অঙ্গ। আমাদের প্রত্যাশা, বটমূলে অর্ধ শতাধিক বছরের এই উৎসবের ধারায় বাঙলির প্রত্যাবর্তন হবে সংযমী-প্রাণবন্ত-আনন্দঘন এবং বিপর্যয় বিনাশের অঙ্গীকারে বলীয়ান।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রমজান মাসের পবিত্রতা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে এবার শিল্পীসংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। সাধারণভাবে ছায়ানটের বর্ষবরণের মঞ্চে কমবেশি সোয়াশো শিল্পী থাকে।
এপি/