রঞ্জনা বিশ্বাসের হাতে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
ভালোবেসে শুধু জীবনকে উদযাপন করতে শেখো
‘১৫ বছর আগে যে জীবনকে আমি অস্বীকার করতে চেয়েছিলাম আজ সেই জীবন অনন্যা স্বীকৃতি পাচ্ছে। এই বিষয়ে ঘোর আমার কাটছে না। আমি সকলকে বলতে চাই, ভালোবেসে শুধু জীবনকে উদযাপন করতে শেখো।’ এভাবেই পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করলেন প্রাবন্ধিক-গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস। তিনি ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৮’-ভূষিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
রঞ্জনা আরও বলেন, ‘যেসকল নারী জীবনের অর্থ বোঝেন না, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, জীবনে প্রয়োজনের জন্য বাঁচুন। সমাজের প্রতিটি শ্রেণিপেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ হিসেবে নিজেকে অতিক্রম করে যান।’
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক আকিমুন রহমান। সভাপতিত্ব করেন অনন্যা-সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে রঞ্জনা বিশ্বাসের উপর লেখক-নির্মাতা ও সাংবাদিক তাপস কুমার দত্ত নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এবং অনুষ্ঠানটি শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের পরিবেশনা দিয়ে।
আকিমুন রহমান বলেন, বেদেরাও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগের কাহিনির শেষ নেই। কিন্তু আমরা সেটা মানি না। রঞ্জনার গবেষণায় আমরা বেদেদের কথা জানতে পারি। মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা জানতে পারি। বাংলা ঐতিহ্যবাহী পালকিবাহীদের জীবন ও অনালোচিত সেই ইতিহাসও আমাদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তিনি লোকগীতি, লোকসঙ্গীতের কথাগুলোও তুলে ধরেছেন।
তাসমিমা হোসেন জানান, রঞ্জনা বিশ্বাস নতুন প্রজন্মের লেখক। ওর দেখার দৃষ্টিও অনন্য।
উল্লেখ্য, দেশের প্রবন্ধ ও গবেষণা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রঞ্জনা বিশ্বাসকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি একইসঙ্গে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪। বেদে জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের লোক-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসাহিত্য তাঁর গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয়। ইতিপূর্বে রঞ্জনা তরুণ লেখক হিসেবে কালি ও কলম সাহিত্যপুরস্কার এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্যপুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে: ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম’-১ম খণ্ড, ‘বাংলাদেশের পালকি ও পালকিবাহক’, ‘বেদে জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রা’, ‘বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস’, ‘বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা: উৎস ও তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য’, ‘বাংলাদেশের বেদে জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়’, ‘নারী পুরুষ সম্পর্ক: জেনেটিক প্রভাব’, ‘মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়’- ১ম খণ্ড, ‘লোকসংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল’, ‘লোকগানে বঙ্গবন্ধু’, ‘নারীপুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর কিশোরজীবন : আমাদের মহানায়ক’, ‘আমি মুজিব বলছি : অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সমাপ্ত অধ্যায়’, ‘‘রবীন্দ্রনাথ : ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘সুভা’ ও ‘দালিয়া’’, ‘বিষ্যুৎবারের বারবেলা’, ‘জয়নাল বাদশা ও রাজপুত্র তাজেম’, ‘আয়নায় ভাঙতে থাকা চাঁদ‘, ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’।
বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্যপুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিককে বাংলাদেশের সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত ২৬জন নারী সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অনন্যা সাহিত্যপুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এ-পর্যন্ত যারা এ পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরা হলেন: সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, ড. সন্জীদা খাতুন, জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন, সোনিয়া নিশাত আমিন, বেগম মুশতারী শফী, বেগম আকতার কামাল, আকিমুন রহমান, নাদিরা মজুমদার ও ঝর্না রহমান।
এপি/