শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

নয়নের জল নয়নে শুকায়

সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেবার আর কয়েক মাস বাকী। নির্ঝঞ্ঝাটের মধ্যে অবশিষ্ট দিনগুলি কাটিয়ে দিতে চাইছেন অ্যাডভোকেট আফসার খান। এমন সময়ে ইংল্যান্ডের একটি আন্তর্জাতিক ‘ল’ সোসাইটি’ তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য। ইংল্যান্ড দেশটি মিস্টার খানের কাছে নুতন কোনো দেশ না। জীবনের সোনালী দিনগুলি সেখানেই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন। সরকারি কাজেও তাকে সেখানে কয়েকবার যাওয়া-আসা করতে হয়েছে। তাই আমন্ত্রণ পত্রখানা পাওয়ার পর হৃদয় কম্পিত হওয়ার মতো কিছুই হয়ে উঠেনি। তা ছাড়া, এই বুড়ো বয়সে আগের মতো কোথাও যাওয়া আসার ব্যাপারে সে রকম রোমাঞ্চ অনুভব করেন না।

ছেলেগুলি মানুষ হয়েছে, সবাই নিজেদের জীবনের বাছাই করা পেশায় প্রতিষ্ঠিত। আশ্চর্যের বিষয়, ছেলেদের মাঝে কাউকেই আইনজীবির পেশায় রাজী করাতে পারেননি। তাদের সবার সেই একই কথা, ‘আইনজীবিরা ধোকাবাজ ,আইনের কলাকৌশলে দোষী আসামীকে নির্দোষ প্রমান করাই তাদের কাজ। সুতরাং আমরা এই পেশার ধারে কাছে যেতে চাই না’। কিন্তু মিস্টার খান ছেলেদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না যে, নির্দোষ আসামীকে কাঠগড়া থেকে বাঁচিয়ে আনাটা একজন আইনজীবির কাছে কতবড় তৃপ্তিদায়ক তা একমাত্র ওই মামলায় সংযুক্ত আইনজীবি ছাড়া অন্য কেউ উপভোগ করতে পারবে না। মিস্টার খান কখনো কখনো ভাবেন ,যদি তার পাঁচ ছেলের মধ্যে একটি মেয়ে থাকতো তাহলে হয়তোবা উনার কথামতো সে আইনজীবি পেশায় লিপ্ত হতে পারত।

আজ ও মনে পরে এইতো সেদিন, তিন তিনটে ছেলে হবার পর মিস্টার খান ভাবলেন, ‘আর নয় ,এখানেই শেষ। মেয়ে মেয়ে করে বাংলাদেশে আর জনসংখ্যা বাড়াতে চাই না।’ বন্ধুরা বলাবলি করত,’ তোরা তো আধুনিক শিক্ষিত দম্পতি, তোদের তো দুটির বেশী সন্তান হবার কথা নয়। তোরাই যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ না করিস, তাহলে সাধারণ মানুষদের দোষ দিয়ে লাভ কী ?’, তাইতো, মিস্টার খান ভাবেন ,অনেক পরিবারে একটি ছেলের জন্য রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়, এদিকে একটি মেয়ের জন্য তাদের নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত হতে চলল। অবশেষে শেষ চেষ্টা করা হলো। তখনকার দিনে Pregnency scan করার মতো তেমন সুযোগ ছিল না অর্থাৎ ছেলে কি মেয়ে হবে সেটা জানাটা এখনকার মতো এত সহজ ছিল না। তাইতো মাদ্রাজের এক নামকরা মেটার্নিটি ক্লিনিকে বসে তিনি ভাবছিলেন, এবার যেন তাদের একটা মেয়ে হয়। কিন্তু বিধির বিধান, কে খণ্ডাবে? কিছুক্ষন পর ওয়েটিং রুমে এসে যখন তামিল নার্স তাকে জানালেন, ‘Congratulation Mr Khan I have got a good news for you , you have a twin and both Mother and babies are doing well, পরক্ষনেই খান সাহেব ,ব্যগ্রচিত্তে নার্সকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যমজ বাচ্চারা ছেলে না মেয়ে?’ নার্স সুন্দর একটা হাসি দিয়ে জানালো, ‘I am glad to say, both are boys’। খান সাহেব কথাটি শুনে তো অবাক, নার্স বলে কি , দুটোই ছেলে! কথাটা শুনে হতাশায় মিস্টার খানের মনটা ভেঙে গেল। হায় খোদা, ‘মানুষ যা চায় তা পায় না, সে জন্যই বুঝি নিয়তির কাছে মানুষ যুগ যুগ ধরে পরাজয় স্বীকার করে আসছে’।

জুনিয়র উকিলের ডাকে মিস্টার খানের ধ্যান ভাঙল। ‘স্যার, কী ভাবছিলেন ? কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি উত্তর দিলেন, ‘ভাবছিলাম কি, তোমাদের মাঝখান থেকে আমার হয়ে কেউ ওই সম্মেলন থেকে ঘুরে এসো । এই বুড়ো বয়সে আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাদের মতো প্রতিভাবান ছেলেদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য এ ধরনের সম্মেলনে যোগদান করা দরকার’। সমবেত কণ্ঠে রুম থেকে সে এক কথা, ‘স্যার, আপনাকেই যেতে হবে ,যদিও আপনি খুব শিগগিরই অবসর নিচ্ছেন, তবু ও আপনার মতো বিচক্ষণ কৌসলীর আমাদের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা একান্ত দরকার’। কলিগ আজম সাহেব কিছুটা জোর দিয়ে বলল’ স্যার,পৃথিবীর বিখ্যাত আইনবিদগণ ওখানে আসবেন, পান্ডিত্য দেখাবেন, সেক্ষেত্রে আমরা আপনাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না’। মিস্টার খান একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বে সম্মলনে যোগদান করতে রাজী হলেন।

ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর চেমসফোর্ড। এই শহরই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে। শহরটি লন্ডন নগরী থেকে ২৫/৩০ মাইল দূরে। প্রাকৃতিক শোভায় সম্মৃদ্ধ। সুন্দর পরিছন্ন শহর। বিরাট আয়োজন। সম্মেলন তিন দিন ধরে চলবে। পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ঝানু আইনবিদদের উপস্তিতি। ফটকে করা প্রহরী। সকালের কফি শেষে সম্মেলন শুরু হবার কথা। ক্যাফেটেরিয়ার একটি টেবিলে বসে মিস্টার খান গরম কফি পেয়ালায় চুমুক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় ৯/১০ হাত দূরে অবস্থিত অন্য একটা টেবিলে বসে ২৯ /৩০ বছরের এক যুবতী মেয়ে উনার নেমপ্লেটের দিকে বার বার লক্ষ্য করছিলো। নেমপ্লেটে ইংরাজীতে লেখা ,"মিস্টার আফসার খান , পাবলিক প্রসিকিউটর , বাংলাদেশ "। এত লোক থাকতে এই ভিন দেশের
সুন্দরী যুবতী মিস্টার খানের মত একটা বুড়ো লোককে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ,ব্যপারটা উনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। কৌতূহলবশত মিস্টার খান যুবতীর নেম প্লেটের দিকে লক্ষ্য করলো ,তাতে লেখা ,Ulrika Khan , Bar -at -Law ,Sweden।

সুইডেনের মেয়ে ব্যারিস্টার, আর পদবী’ খান, তাজ্জব ব্যাপার তো ! শেষের নাম খানা আবার ভালো করে দেখলেন, Kahn (ইহুদি নাম) নয়, KHAN ই (ইসলামিক নাম) লেখা রয়েছে। বানানের কোনো ভুল নেই। রহস্য আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল। পরিচিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। কিন্তু বেশী বেগ পেতে হলো না। যুবতীটি নিজেই চলে আসলো মিস্টার খানের টেবিলের কাছে শূন্য চেয়ারটাতে। সে মিস্টার খানের পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে নির্ভুল ইংরেজিতে বলল, ‘Mr Khan , I can see you are from Bangladesh and what a coincidence , your surname and my surname is same.’ মিস্টার খান ইংরেজিতে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, তাইতো দেখছি’। মিস উলরিক খান বলল, ‘আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে অনেক আগ্রহী’।

মিস্টার খান একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের মত উন্নত ধনবান দেশের শিক্ষিতা মহিলা আমাদের মতো দরিদ্র দেশ সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছ জেনে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করলাম। কিন্তু তবুও আমার কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, সত্যিই তুমি বাংলাদেশ সমন্ধে জানতে আগ্রহ কি না। উলরিকা বোধদয় মিস্টার খানের কথায় কিছুটা হোঁচট খেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘মিস্টার খান বাংলাদেশ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার আমার একটা বিশেষ কারণ আছে’। মিস্টার খান পরক্ষনেই জিজ্ঞাসা করলেন ‘সে কারণটা কি হতে পারে তা কি আমি জানতে পারি ?’ কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার খান দেখতে পেলেন উলরিকার সুন্দর দু চোখে জল ছল ছল করছে। ম্লান হেসে উলরিকা বললো, ‘ওই সামনের বারে (bar) আজ সন্ধ্যায় আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই’। মিস্টার খান মৃদু হেসে জানালেন, ‘আমি তো অ্যালকোহোল জাতীয় পানীয় পান করি না’। উলরিকা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল। সে আমি জানি ,কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোকই মাদক দ্রব্য পান করে না, তা ছাড়া আমি নিজেও মাদক দ্রব্য পান করি না’।

উলরিকা মিস্টার খানকে ভরসা দিয়ে বলল, ‘আমরা দুজনেই অরেঞ্জ জুস খাব আর বাংলাদেশ সমন্ধে গল্প করব’। পরস্পরে বিদায় নেবার আগে উলরিকা হঠাৎকরে বলে উঠল, ‘বাংলাদেশের
সঙ্গে আমার নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে, তাই আপনার সঙ্গে আমার আলাপ করা একান্ত দরকার। আশাকরি আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ওই বারে (bar) আপনার সাক্ষাৎ পাব’। তারপর তখনকার মতো দুজনে দুজনার কাছ থেকে বিদায় নিল।

বিদেশিদের সত্যিই সময় জ্ঞানের প্রশংসা করতে হয়। ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় উলরিকা নির্ধারিত জায়গায় এসে উপস্থিত। মিস্টার খানেরই বরং ১০/১২ মিনিট দেরী হয়ে গেল। শরৎকাল আসি আসি করছিল। পড়ন্ত বিকেলে পরিষ্কার আকাশটা নীল আভায় ভরপুর ছিল। এক কথায় আবহাওয়া এবং পরিবেশ মিলে সময়টা অত্যন্ত মনোরম ছিল। বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে মিস্টার খান প্রথমে দু গ্লাস অরেঞ্জ জুসের অর্ডার দিয়ে একটা খালি টেবিলে দুজনে মুখোমুখি বসে পড়ে। তারপর কোনো ভূমিকা ছাড়াই উলরিকা শুরু করলো ওর জীবনের না বলা কাহিনী।’ বাংলাদেশ থেকে আমি কি চাই আর কি পাইনি তা আজ আমি বলতে চাইছি না। শুধু এক পিতাহারা এক মেয়ের করুন কাহিনী আজ আপনাকে বলতে এসেছি। আমার মা জুডিথ জেনসেন (খান ) সুইডেনের হেলসিংবেরির মেয়ে। পেশায় ইংরেজির শিক্ষীকা। উনার বরাবরই ইংলান্ডের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তাই প্রথম যৌবনেই ইংরেজি ভাষাকে আরও চৌকশ এবং ইংরেজদের ঐতিহাসিক দর্শনীয়গুলো নিজের চোখে দেখার জন্য লন্ডনে চলে আসেন। সে সময় বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনক্ষেত্র ছিল লন্ডনের পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলে। ভবিষৎ স্বামীর সঙ্গে ওখানেই পরিচয় হয় আমার মার । উনার নাম ও আফসার খান। বাঙালি ছেলে, তবে পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন, কারণ তখন ও বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। আপনার নাম এবং বাংলাদেশ থেকে এসেছেন দেখে মরিয়া হয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ করার আগ্রহ চেপে বসে আমাকে, তারই সুযোগ খুঁজছিলাম। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল। বলতে পারেন মনোস কামনা পূর্ণ হলো। উলরিকা তার কথায় কিছুক্ষন বিরতি নিল। কয়েক ঢোক অরেঞ্জ জুস পান করে তার কথা আবার শুরু করল, ‘মিস্টার খান,আমি জানি খান পদবী বাংলাদেশে-ইংল্যান্ডের স্মিথ পদবীর মতো পথে-ঘাটে ছড়িয়ে আছে।

তবুও ভাবলাম, বাংলাদেশ থেকে যখন এসেছেন তখন আপনার কাছে আমার আরজিখানা পেশ করতে পারব। আমার একান্ত অনুরোধ, ঘটনাক্রমে যদি বাংলাদেশে কখনো কোনো ‘বার’ অ্যাসোসিয়েশনে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তাহলে তাকে জানাবেন, তার মেয়ে উলরিক খান সেই সুদূর সুইডেনে বসে প্রতি রাতে ঘুমোবার আগে তার জন্য অশ্রু ঝরায়। তার যে একান্ত ইচ্ছে ছিল ব্যারিস্টার হবার, যা সে হতে পারেনি। তার মেয়ে ব্যারিস্টার হয়েছে। শুধু এই কষ্টটুকু আমার জন্য করবেন। তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই’।

তারপর উলরিকা তার হাত ব্যাগ থেকে কয়েক দশকের এক পুরোনো ছবি বের করে মিস্টার খানের সামনে ধরল এবং সঙ্গে সঙ্গে জানাল, ‘এটা আমার বাবার ছবি এবং ছবিখানা আমি সব সময়ই আমার কাছে রাখি, আর আমি ভাবি আমার বাবা আমার সঙ্গেই আছেন। ছবিখানা দেখেই মিস্টার খানের মাথা চরকগাছ !! উনার মাথাটা যেন দুলতে শুরু করল, মনে হলো এখনই বুঝি মাটিতে পড়ে যাবেন। কিন্তু তা হলো না, শুধু দুচোখ বেয়ে অশ্র্রু গড়িয়ে পড়ল। মিস্টার খান নিশ্চিত হলেন, তা হলে উলরিকা তারই মেয়ে। জীবনে তিনি যা হতে পারেননি, উলরিকা তার সেই ব্যারিস্টার হওয়ার সাধ পূরণ করেছে। তিনি কি এখন বলতে পারেন, ‘আমি তোমার সে হারিয়ে যাওয়া বাবা ,আর তুমিই আমার মেয়ে’। নিজেকে অপরাধী ভেবে সে কথাটি বলার আর সাহস হলো না। আজ বয়সের ভার আর দাড়ির আড়ালে উলরিকা উনাকে চিনতে পারছে না। উলরিকা যে ছবিখানা মিস্টার খানকে দেখালো সেটা তোলা হয়েছিল লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ল’ পাশ করার পর কনভোকেশনের দিনে। সঙ্গে ছিল উলরিকার মা। তারপর কত স্বপ্ন দেখেছেন জুডিথ জেনসেনকে অথাৎ উলরিকার মাকে নিয়ে। যথা সময়ে মিস জেনসেনকে বিয়ে করে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ভর্তিও হয়েছিলেন। এমন সময় দেশ থেকে আর্জেন্ট চিঠি এলো, মা গুরুতর অসুস্থ। কোনো উপায় না দেখে জুডিথকে লন্ডনে রেখেই দেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন। দেশে পৌঁছে যা দেখলেন ,তা অন্যরূপ। মায়ের শরীর খারাপ, ওটা একটা উছিলা ছিল। আসলে উনাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এভাবে ডাকা হয়েছে। তা না হলে উনি হয়তো দেশে এভাবে ফিরতেন না। পরিবেশের চাপে পড়ে মিস্টার খানের বিয়ে হয়ে গেল, আর এভাবেই উনার জীবন থেকে জুডিথ ও হারিয়ে গেল। বিলেতে আর ফেরা হলো না।

উলরিকার ডাকে মিস্টার খানের অন্যমনস্কতা ভেঙে গেল, সে একটু উদ্বিগ্ন চিত্তে বলল, ‘মিস্টার খান, আপনার চোখে জল যে’। কথা চাপা দেবার জন্য তিনি বললেন, ‘বুড়ো বয়সে চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে ,তাই মাঝে মাঝে চোখে জল এসে যায়, উলরিকা আবার বলল, ‘আপনি আমার বাবার বয়সী, আপনার চোখের জল আমি কি মুছে দেব?’ ‘ধন্যবাদ’ , মিস্টার খান বিনয়ের সঙ্গে জানালেন , ‘মুছে দিয়ে আর কী লাভ ! আবার তো চলে আসবে, নয়নের জল নয়নেই শুকাতে দাও’।
‘আচ্ছা, তাই হোক’ উলরিকা সম্মতি জানালো।

ইতিমধ্যেই উভয়ই পরস্পরের কাছে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। উলারিকা আবার শুরু করল তার জমানো কথা, ‘জানেন মিস্টার খান ,যদিও আমার বাবা একজন বিদেশিনীকে বিয়ে করেছিলেন তবুও উনি ছিলেন মনে প্রাণে একজন খাঁটি বাঙালি। আমার মা বলতেন, হঠাৎকরে আমার বাবা রাত দুপুরে জেগে উঠে রবীন্দ্র সংগীত/নজরুল গীতি শুনতে বসে যেত। দেশের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সর্বশেষ সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত’। উলরিকার হৃদয়স্পর্শী কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে মিস্টার খান জিজ্ঞাসা করল, ‘যে লোকটা তোমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি, তোমার মাকে ঠকিয়েছে, তার জন্য তোমার কেন এত আগ্রহ?’

উলারিকা দৃতার সঙ্গে উত্তর দিল, ‘আমার মার কোনো বিশ্বাস নেই আমার বাবার প্রতি, কিন্তু আপনিই বলুন, আমি কি করে বিশ্বাস হারাতে পারি? উনি তো আমার জন্ম দাতা ’কথাটি বলে সে মিস্টার খানের দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে রইল।

কি বা বলবে, কারণ মিস্টার খানের কাছে এ মুহূর্তে বলার কিছু ছিল না। মিস্টার খানের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে উলারিকা নিজেই বললো, ‘নিশ্চয়ই কোনো সাংঘাতিক কারণ ছিল যার জন্য আমাদের আর কোনো খোঁজ খবর নিতে পারেননি, হয়তোবা এ ভুলের জন্য এখনো তিনি পদে পদে কষ্ট পাচ্ছেন’। ‘হয়তোবা’ মিস্টার খান অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলেন। সে সময় মিস্টার খানের কাছে মনে হচ্ছিল ,জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, যেন বুকটা ভেঙে চুরমার হতে চলছে। ভাবছে এ কী হলো!

রাত গভীর হতে চলছে। দুজনে দুজনকে শুভরাত্রি জানিয়ে ‘আগামীকাল আবার দেখা হবে’ অঙ্গীকার করে হোটেল রুমে ফিরে গেল। তারপর মিস্টার খান সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। তিনি ভাবছেন, তাহলে উলরিকা আমারই মেয়ে, ওর মা এখন কোথায়? নিজের পরিচয় টুকু কি জানিয়ে দেবেন? অজস্র চিন্তা-ভাবনায় উনার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। ভোরবেলা কনফারেন্স রুমে ঢুকতেই উলরিকার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। উলরিকা মিস্টার খানকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মিস্টার খান আপনাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছে, রাতে কি ঘুমের কোনো অসুবিধা হয়েছিল’। ‘তুমি ঠিক ধরেছ , বয়সের জন্য ঘুমের একটু ব্যাঘাত হয়েছে ’, মিস্টার খান জবাব দিলেন।

বিকাল বেলায় কনফারেন্স শেষ হলো। আগামীকাল সবাই হোটেল ছেড়ে যে যার দেশে চলে যাবে। মিস্টার খানের মন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। কি করা যায় ভাবছেন। উলরিকাকে ওর রুমে ফোন করলেন,’ কাল তো আমরা সবাই চলে যাচ্ছি, এ মুহূর্তে আমরা দুজনে, কী করতে পারি?’ অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো, ‘চলুন, সাগর পাড়ে আজকের সন্ধ্যাটি কাটিয়ে দেই। আমার মা বলতেন, আমার বাবা জল, নদী, সাগর খুবই ভালোবাসতেন’। মিস্টার খান জানালেন, ‘বাংলাদেশের সব ছেলে মেয়ে জল নদী, সাগর, ভালোবাসে। কারণ, এতেই তাদের জন্ম, আর বেড়ে উঠা, তাদের জীবনের গতিধারা এই নদী, সাগরের মতো উত্তাল, উচ্ছল।

তারপর ঘণ্টা খানকের মধ্যে উলরিকা মিস্টার খানের রুমের ‘door bell’ বাজাল। মিস্টার খান তাকে দেখে একেবারে হতভম্ব, তিনি এ কি দেখছেন! উলরিকা শাড়ী পরে উনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিস্টার খান জিজ্ঞাসা করল, এ শাড়ি তুমি পেলে কোথায়’? উলরিকা মিস্টার খানকে আরও হতবাক করে বললো, ‘এটা আমার মার শাড়ি। আমার বাবা প্রথম এই শাড়িখানা আমার মাকে উপহার দিয়েছিলেন। এই শাড়িটি প্রায় তিরিশ বছরের পুরোনো।’ কথাগুলি শুনে মিস্টার খানের হৃদয় যেন চৌচির হয়ে যেতে লাগল। জীবন যে এত কষ্টকর, তা তিনি কখনো ভাবেননি। সাগর পারের পরিষ্কার বালির উপর দিয়ে মেয়ে আর বাবা হেঁটে চলছে, আর সেই সঙ্গে মিস্টার খান মনে মনে কামনা করছে, এ চলার পথ যেন শেষ না হয়। আগামীকাল যেন না আসে। অতীত হারিয়ে গেছে, বর্তমান যেন চিরন্তন হয়ে থাকে।

Header Ad

পানি শুন্য ছোটযমুনা নদীর বুকে ধান চাষ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

চারদিকে শুধু ধান আর ধান। দেখে মনে হবে হাজার বিঘার মাঠ। সেখানে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল ধান। আর সেই ধান কাটছে বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা নিজেরাই শ্রমিকের মতো ধান কাটছে। আবার একজনকে গরু চড়াতেও দেখা যায়।

বলছি নওগাঁর খরস্রোতা ছোট যমুনা নদীর কথা। হঠাৎ চোখে পড়ে নদীটির বুকে ধান চাষ। শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়া- কাদিবাড়ি পাশাপাশি দুটি এলাকায় ধান চাষ করেছেন শতাধিক কৃষক। সেই নদীর বুকে কয়েকজনকে ধান কাটতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গা থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় তসলিম, আফজাল, রফিকুল, শামিম ও মোস্তফার সাথে। তারা জানালেন, আমরা ৫-৭ জন মিলে বেশ কিছু জায়গায় ধান চাষ করেছি। তাই নিজেরাই ধান কাটছি। এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। অবশ্য বৃষ্টির কারণে পানি জমতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন পর পানিতে ভরে যাবে নদীটি। তারা আরও জানান, উত্তর দিকের তেজপাড়া ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন লোকজন এই নদীর বুকে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নদী শুকালে আমরা ধান চাষ করতে পারি। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নদীর বুকে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে এসেছেন এক যুবক। তিনি জানালেন, প্রায় দেড় মাসে আগে এই নদি শুকিয়ে গেছে।

তবে যেখানে যার মানানসই। নদীতে থাকবে পানি, আর মাঠে হবে ধান। এমন দৃশ্যই ভালো লাগবে সকলের। আর যে যার মতো সুবিধা খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক।

নওগাঁর নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী বলেন, বিভিন্ন নদী, খাল-বিল, প্রাকৃতিক বনায়নে ভরপুর আমাদের মাতুভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের বিরূপ আচরণের কারণে আমরা নিজেরাই প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করে ফেলছি। নওগাঁসহ সারাদেশের নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি জনসচেতনতাও এর জন্য দায়ী। তবে নদী শুকিয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা সেটা খারাপ কিছু না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে চাষ করলে ভালো হয়। এতে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৭শত ৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া নদীর ধারে উল্লেখযোগ্য হারে ধান উৎপাদিত হয়েছে। কারণ নদীর পাশের জমিতে পলির আস্তরণ জমে এবং সেখানে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সেখানে ধান, সবজিসহ সব ধরণের ফসল ভালো উৎপাদিত হয়ে থাকে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ কয়েকটি নদী ও খাল পুন:খননের জন্য আবেদন দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে যেকোনো সময় কাজ শুরু হবে।

এদিকে নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনের চেষ্টায় বদলগাছী উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর ৩৩ কিলোমিটার অংশের পুন:খনন কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেটা যেকোনো সময় বাস্তবায়ন হওয়ার পথে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্জনে অর্জন দেখছে বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে অংশ না নিলেও চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নজর ছিল বিএনপির। সদ্য শেষ হওয়া প্রথম ধাপের নির্বাচন বর্জনে নানামুখী অর্জন দেখছে দলটি। এর অন্যতম কারণ, ভোটার উপস্থিতি কম, হামলা, সংঘর্ষ, জালভোট, কারচুপি, বর্জনের মতো নেতিবাচক দিক ছিল নির্বাচনে। পাশাপাশি দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী প্রার্থীরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি।

বিএনপি নেতাদের মতে, বিএনপির আহ্বানের কারণে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জোরাল হবে। কূটনৈতিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ বাড়বে, যা আগামী দিনে বিএনপির রাজপথের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনের পর রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফেরাম স্থায়ী কমিটির সভায়। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির পর্যবেক্ষণে কি উঠে এসছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় বিএনপির প্রধান দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ভূমিকা রাখবে বলে নেতারা মনে করেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়ার হার ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, দিনব্যাপী ভোটারের আকাল ছিল। সেখানে এই পরিসংখ্যান একেবারেই অগ্রহযোগ্য।

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, অংশ গ্রহণ না করলেও নির্বাচন মনিটর করেছে বিএনপি। ভোটারা যাতে কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহী হয়, সে জন্য আগে থেকেই দলের তৎপরতা ছিল। নির্বাচনের দিন সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মী ও দলের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে আগে থেকেই গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

দলের নেতাদের মতে, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্তি দিকগুলো হচ্ছে, আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। দলের কর্মীরা আর্থিক ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল অন্তদ্বন্দ্ব কোন্দলের বিষয়টি সামনে এসেছে।

দেশের মানুষ ভোটবর্জনের আহ্বান সাদরে গ্রহণ করছেন বলে দলটির সর্বস্তরের নেতারা মনে করেন। তাদের মতে, নির্বাচন বিরোধী দলগুলোর অংশ না নেওয়া এবং ভোট থেকে বিরত থাকার আহ্বানে মনের দিক থেকে জনগণ আরও শক্ত অবস্থানে ছিল। ফলে জোরজবরদস্তি করে অল্পসংখ্যক মানুষকে নিতে পারলেও বড় অংশ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ফলে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই ভোট গ্রহণযোগ্য করা কঠিন হবে। নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের কথাগুলো সাধারণ মানুষ আগ্রহ নিয়ে শুনেছেন। লিফলেট বিতরণের মধ্যমে দলের বক্তব্য পথঘাটে, দোকানে, ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে জনগণ।

উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করার জন্য দলের নেওয়া পদক্ষেপ কাজে লেগেছে দাবি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ভোটারদের ভোটবিমুখ করতে প্রায় লাখ লাখ লিফলেট ছাপিয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডগুলোতে পাঠানো হয়েছিল। উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রামপর্যায়ে কর্মিসভা, মতবিনিময় সভা এবং যৌথ সভাও হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও। দলের নানামখী উদ্যোগের ফলে ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ ছিল। তিনি বলেন, এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রামাণিত হয়েছে। এই নির্বাচন বর্জন করে অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে, তাদের নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো মামলার মুখোমুখিও হতে হয়নি।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের আগের দিনও ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ রাখার চেষ্টা সফলতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কারণ, সর্বশক্তি নিয়োগ করেও অনেক স্থানে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়নি। এ ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়ে থাকে। আর বিএনপির ভোটার ফেরানোর কার্যক্রমে অনেক কর্মী সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। এরপরও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় বিএনপি নেতারা খুশি।

প্রসঙ্গেত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয় দলটি। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭৯ জন নেতা এবং দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেওয়া ৬১ নেতাকে বহিষ্কারও করে তারা। পাশাপাশি হুঁশিয়ার করা হয়, বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা ভোটে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃতদের কোনোভাবে সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে দেশব্যাপী লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করে।

ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের রক্ষা করুন, বললেন পলক

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোন-শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। তাদের থেকে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের আল্লাহ রক্ষা করুন। তারা যেন মুক্ত স্বাধীনভাবে নিজেদের ভূ-খন্ডে বসবাস করতে পারে সেই প্রার্থনা করি, বললেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক।

শুক্রবার (১০ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিংড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আয়োজিত হাজি সমাবেশ-২০২৪ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গি ইজতেমার জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা করেছেন। ইসলাম ধর্মের সম্প্রসারণ করার জন্য এবং কাকরাইল মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদ প্রতিষ্ঠান করেন। তিনি আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ কমপক্সে নিমার্ণ করেছেন। আমাদের মাদরাসা, মসজিদে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন। হাজিদের জন্য সুন্দর, সহজ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল হজ্বের সকল কার্যক্রম তিনি নিজে তদারকি করছেন।

এসময় তিনি সারাবিশ্বের মুসলিম জাহানের মধ্য ঐক্য, শান্তি এবং যারা অত্যাচার, কষ্টের মধ্য আছেন, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মুক্তি কামনা করেন।

আরাফাতি হাজী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনু্ষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ওহিদুল রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, আরাফাতি হাজী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশিদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

পানি শুন্য ছোটযমুনা নদীর বুকে ধান চাষ!
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্জনে অর্জন দেখছে বিএনপি
ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের রক্ষা করুন, বললেন পলক
বিএনপির সমাবেশ মানেই অগ্নি সন্ত্রাস ও রক্তপাত: ওবায়দুল কাদের
চড়া সবজির দাম, নাগালের বাইরে নিত্যপণ্য
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন গোবিন্দগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দ
ইসরায়েলের তীব্র হামলার মুখে রাফা ছাড়ল ৮০ হাজারের বেশি মানুষ
টাঙ্গাইলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ
ভারতীয় নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করছি না : যুক্তরাষ্ট্র
বাবা হওয়ার খুশিতে আবারও বিয়ে করলেন জাস্টিন বিবার
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ ইস্যুতে ভোট আজ
মানিকগঞ্জে পাইলট আসিমের জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল
দেশে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ চলছে: প্রধানমন্ত্রী
বুবলীর পর একই থানায় অপু বিশ্বাসের জিডি!
বিমান ঘাঁটিতে পাইলট আসিমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত
ইউরোপা লিগ: অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে ফাইনালে লেভারকুসেন
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ
প্রেমিক যুগলকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা, ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত
বিদায় নিচ্ছেন পিটার হাস, নতুন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন ডেভিড মিল