বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

তুরাগ পাড়ে মর্ডান কন্টেইনার রেস্তোরাঁ ‘ক্যাফে রিভার ফ্রন্ট’

প্রকল্পটির আর্কিটেকচারাল ডিজাইন। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

তুরাগ নদীর পাড়ে বিরুলিয়া ব্রিজের ধারে চল্লিশ ফুট দীর্ঘ, আট ফুট চওড়া আর সাড়ে ৯ ফুট উঁচু- এমন ১৪টি কন্টেইনার দিয়ে তৈরি হয়েছে ক্যাফে রিভার ফ্রন্ট। জায়গার আসল মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের থেকে লিজ নিয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় সবুজ ছায়াময় জনপরিসর হিসেবে গড়ে তুলছে।

কন্টেইনারের তৈরী রেস্তরাঁ : সংগ্রহীত
কন্টেইনারের তৈরি রেস্তোরাঁর বর্তমান অবস্থা। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

আরো কিছু পরিকল্পনায় আছে ড্যাফোডিলের। যেমন ইনোভেশন সেন্টার, ক্র্যাফট ডিসপ্লে সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা। তবে আপাতত ১ ডিসেম্বর থেকে রেস্তোরাঁটি পরীক্ষামূলকভাবে (সফট লঞ্চিং) চালু করা হবে। এর দক্ষিণদিকে এর প্রবেশদ্বার, উত্তরদিকে নদী কিছু দূরে তবে পশ্চিম দিক একেবারেই নদী ঘেঁষা, মিরপুর-আশুলিয়া রাস্তাটি পূব পাশে। হালকা শীতের শুরু হলেও উত্তরে হাওয়া ভিতরে ঠান্ডা , নদী ছুঁয়ে আসা পশ্চিম দিকের হিমেল বাতাসও ছড়িয়ে যাচ্ছে।

 

ক্রেন দিয়ে কন্টেইনার বসানোর কাজ করা হচ্ছে। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

সিমেন্ট, কংক্রিট, ইট দিয়ে যে স্থাপনা তৈরি হয় তাতে পানির ব্যবহার হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে, আর কন্টেইনারের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি স্থাপনাগুলো হয় শুষ্ক। এতে ব্যাপক হারে ঝালাই বা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করা হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে কন্টেইনার স্থাপনা অনেক জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ দ্রুত এবং স্বল্প খরচে একে বাসযোগ্য করে তোলা যায়।

 

স্থাপনা তৈরির জন্য কন্টেইনার আনা হয়েছে। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

শীতপ্রধান দেশে দুইজনের একটি পরিবারকে দেখা যায় বনের কাছে, জলাশয়ের ধারে একটি কন্টেইনারেই বাসা বানিয়ে ফেলেছে। বড় সুবিধা এর দেয়াল, ছাদ ও দরজা পাওয়া যায় রেডিমেড। স্থাপনাটি লোহা দিয়ে তৈরি বলে এগুলো দিনের তাপ ভিতরে বেশি ধরে রাখতে পারে আবার বাইরের ঠান্ডাও কম ঢোকায়। আমাদের দেশে অবশ্য এটাই বড় প্রতিবন্ধকতা।

 

নির্মাণাধীন ক্যাফের কন্টেইনার সেটআপ করার পরের চিত্র। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা রেস্তোরাঁর মেহমানদের কাছের গোলাপগ্রাম বা বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি অথবা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে আনার।

রেস্তোরাঁটি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, 'আমরা একে কেবল একটা খাওয়ার জায়গা হিসেবে গড়ে তুলছি না, আমরা চাই দিনভর গেস্টরা এখানে অবসর যাপন করুক, ফেরার সময় মনে রাখার মতো স্মৃতি নিয়ে ফিরুন। তা হতে পারে মাছ ধরা বা সবজি চাষ। কাস্টমার নয়, আমরা চাইছি গেস্ট। একটি পরিবারে বৃদ্ধ, মাঝবয়সী, নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাও থাকে। প্রত্যেকের জন্যই এখানে কিছু না কিছু থাকবে। সবারই অবসর-বিনোদনের জায়গা করে তোলার চেষ্টা রাখব আমরা।'

 

কন্টেইনার সেটআপ করার পরের চিত্র। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান ২০১২ সালে বুয়েট থেকে বিআর্ক (ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার) সম্পন্ন করেন। তারপর যোগ দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। একইসঙ্গে কয়েকজন সহপাঠী ও বন্ধু মিলে গড়ে তুলেন একটি স্থাপত্য চর্চা প্রতিষ্ঠান বা আর্কিটেকচার ফার্ম। প্রথম দিকে আবাসিক ভবনেরই নকশা করতেন। দুই বছর পর তিনি যোগ দেন ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচারে।

প্রকল্পটির সাথে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন। প্রকল্পটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে দুইজন ইন্টার্নশিপ করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাদেরকে যুক্ত করা হয়েছিল।

এ প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন জয়েন্ট ডিরেক্টর (প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট) নাজিম উদ্দিন সরকার, স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের সাথে যুক্ত ছিলেন সিনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আহমেদ এবং ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান মজুমদার।

 

কন্টেইনার সেটআপ করার পরে নির্মাণাধীন ক্যাফে রিভার ফ্রন্ট রেস্তোরাঁ। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

ড্যাফোডিল বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। বিশ্ব ততদিনে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং তার প্রভাব নিয়ে সরগরম, সচেতনতাও বাড়ছিল ক্রমে ক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার নীতি গ্রহণ করে। তাই যখন বিরুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি তাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও নবায়নযোগ্য উপকরণ দিয়ে স্থাপনা তৈরির প্রয়াস নেয়।

 

প্রকল্পটির আর্কিটেকচারাল মডেল। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

ফলাফলে কন্টেইনার হাউজ এবং কন্টেইনার দিয়ে তৈরি একটি ছাত্রী হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়। রেজওয়ান ও তার বন্ধু স্থপতি আজকা ইশিতা এর মধ্যে নীলফামারী উপজেলা পরিষদের শিশু পার্ক তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তারা গতানুগতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে এখানে টায়ার দিয়ে বিভিন্ন রাইড গড়ে তুলেন।

প্রকল্পটির বিষয়ে শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, আমরা পৃথিবীতে অনেক প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পর আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল অব্যবহৃত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার উপযোগী করে তোলা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য সামঞ্জস্য রাখা। আমাদের প্রকল্পটিতে একটি ব্রিক ফাউন্ডেশন করে স্লাব কাস্টিং করে কন্টেইনার গুলোকে ব্যবহারের উপযোগী করেছি। কন্টেইনার গুলোকে ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে সংযুক্ত করেছি। এখানে জানালা এবং দরজা গুলো আশেপাশের প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কাঠামো সাজিয়েছি। ওয়েদারের উপরে ভিত্তি করে প্রকল্পটির ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে।

 

প্রকল্পটির আর্কিটেকচারাল ভিউ। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান

এ দেশে কন্টেইনার স্থাপনা জনপ্রিয় হওয়ার একটি কারণ সরকারি অনেক জমি বেকার পড়ে থাকা। সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া জমিতে যেহেতু স্থায়ী কাঠামো গড়া যায় না তাই কন্টেইনার হাউজ একটি ভালো বিকল্প। আড়াই মাসের মধ্যে ফাউন্ডেশন ছাড়াই এ দিয়ে স্থাপনা তৈরি করে ফেলা যায়।

রেস্তোরাঁ কাজে না এলে রেস্ট হাউজে পরিবর্তন করে নেওয়াও কঠিন কাজ নয়। মেগা মল বা মিলনায়তন হিসেবেও ব্যবহার করা চলবে। আমাদের দেশে একাধিক সমুদ্র বন্দর আছে। কন্টেইনার প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়াও কঠিন নয়। সেগুলো অব্যবহৃত পড়ে থাকলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কন্টেইনার পাওয়া যায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকায়। কেবল খেয়াল রাখা দরকার চোরা ফাটল আছে কি না আর তা পরীক্ষা করার জন্য বর্ষাকালই উপযুক্ত সময়।

এছাড়াও তিনি (শেখ মোহাম্মদ রেজওয়ান) রেস্তোরাঁটি সবাইকে ঘুরে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

 

Header Ad

গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

টানা সাত মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। ইসরায়েলি বর্বর এই হামলা নিরলসভাবে চলছে এবং এরই মধ্যে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে মিলেছে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান।

এই গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বাতাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি মেডিকেল দলগুলো গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবর আবিষ্কার করেছে বলে বুধবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে।

মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনের লাশ গণকবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে এবং আরও লাশের খোঁজে অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা এখনও চলছে।

আনাদোলু বলছে, গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে সাতটি গণকবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ৩৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং আরও ৭৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে তিনটি গণকবর, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তিনটি এবং উত্তর গাজার কামেল আদওয়ান হাসপাতালে একটি গণকবর পাওয়া গেছে। এতে আরও বলা হয়, সাতটি গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের মারাত্মক আক্রমণ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে গাজা উপত্যকা শাসনকারী দল হামাস।

গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে, নতুন গণকবরের আবিষ্কার ‘আমাদের জনগণ এবং চিকিৎসাখাতের বিরুদ্ধে অপরাধী দখলদার সেনাবাহিনীর বর্বরতার নতুন প্রমাণ’।

হামাস আরও বলেছে, (ইসরায়েলি) দখলদারিত্ব তাদের নির্মূল ও বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা অর্জনের জন্য (গাজায়) মানুষের জীবনের ভিত্তি ধ্বংস করতে চায়।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি সমস্ত মানবাধিকার গোষ্ঠীকে ইসরায়েলের এই অপরাধ নথিভুক্ত করার পাশাপাশি দেশটির দুর্বৃত্ত সত্তা ও অপরাধী নেতাদের জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং অন্যান্য উপযুক্ত আদালতে সেগুলো পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন এক রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে।

সেসময় ওই রায়ে ইসরায়েলকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক

ছবি: সংগৃহীত

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। মংডুর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দুই পক্ষই বোমা ও মর্টার শেল হামলা বাড়াচ্ছে। এতে সেখানে রোহিঙ্গা বসতিতে হতাহতের ঘটনা বাড়ায় পালাচ্ছে মানুষ।

সংঘাত বাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাটে মানুষ চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট এলাকায় ট্রলারে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে নাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য পড়েছে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকাল ৫টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জালিয়াপাড়া গ্রামের ওপারে সুদারপাড়া থেকে থেমে থেমে আসা গোলার শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। সীমান্তে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের ঘটনায় এপারে বসবাসকারীদের মাঝে অস্তিত্ব বাড়ছে।

সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আরাকান আর্মি ও সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান গোলা হামলার ঘটনায় এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, খোনকারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। আগের দিনের তুলনার এপারে গোলার শব্দ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এতে লোকজনের মাঝে অস্বস্তি বাড়ছে।

দুপুরে জালিয়াপাড়া বেড়িবাঁধে উদ্বিগ্ন চোখে বসে ছিলেন বৃদ্ধ শফিক চৌধুরী। দিনমজুর শফিক জানালেন, ‘সীমান্তে গোলাবারুদের ব্যাপক শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ওপারের গোলার শব্দে বাড়িঘর কাঁপছে। মনে হচ্ছে এখুনি সব তছনছ হয়ে যাবে। অস্বস্তি নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। রাতের তুলনায় দিনে আরও ব্যাপক গোলাবর্ষণ হচ্ছে। সীমান্তের লোকজন খুবই চিন্তিত। এই ভিটা-মাটি ছাড়া আর কোনও আশ্রয়স্থল আমাদের নেই। এটা ছেড়ে যাবো কোথায়? এখনও মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ হচ্ছে। বিশেষ করে রাত হলে পরিবারের লোকজন নিয়ে ভয়-ভীতিতে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় গোলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।

মুন্ডারডেইল সীমান্তের বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, আমাদের সীমান্তে নাফনদ না থাকলে পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হতো। নাফনদের কারণে সীমান্তে দূরত্ব রয়েছে। না হয় যেভাবে গোলাবর্ষণ চলছে, এপারে হতাহত এড়ানো যেতো না। কিন্তু সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমরা খুব ভয়ে আছি। ওপারের গোলার শব্দ এত তীব্র যে এপারে আমরা আতঙ্কে চমকে উঠি। তবে মিয়ানমারে এভাবে যুদ্ধ চলমান থাকলে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মতে, গত কয়েকদিন ধরে মংডু টাউনশিপে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১ নম্বর সেক্টরে হামলা চালায় আরাকান আর্মি। বিজিপির ক্যাম্প দখলে নেয় তারা। কিন্তু বেদখল হয়ে যাওয়া বিজিপির সেক্টরটি পুনরুদ্ধারে হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। এতে মংডুর রোহিঙ্গাদের আটটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘরবাড়ি হারিয়ে আবার অনেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, রাখাইনের সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবু সীমান্তে ও নাফনদ জেটিতে প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে ঘুরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে ওপারে চলমান সংঘাতের কারণে যেন কোনভাবে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পরে সেজন্য বিজিবি শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

টেকনাফ পৌরসভার নাফনদের কাছাকাছি বসবাসকারী মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বড় ধরনের গোলার শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। ভয়াবহ শব্দে আতঙ্কে অনেকের ঘুম ভাঙছে। এই সীমান্তের ওপারে মংডুতে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে আরকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের মধ্য। গোলার বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। অনেক সময় মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে।

এদিকে দিন দিন সংঘাত বাড়ার কারণে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন নাফনদে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে মানুষ চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ কায়ুকখালী ঘাটে ট্রলারে মাছ শিকার আপাতত বন্ধ রাখা রয়েছে।

সীমান্তের নাফ নদের ওপারে থেমে থেমে গুলিবর্ষণের কারণে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়েছেন টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম। তিনি বলেন, সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ায় আপাতত মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে মাছ শিকার বন্ধে এই ঘাটের মাঝিমল্লাররা খুব কষ্টের জীবনযাপন করছেন।

নাফনদে ট্রানজিট জেটি ঘাটে টোল আদায়কারী ইমাম হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে সীমান্ত উত্তাল। এ কারণে জেটি ঘাটে আগের মতো লোকজন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকালের তুলনায় আজকেও সীমান্তে অনেক ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে নাফনদ জেটি ঘাটে শূন্য পড়ে আছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সর্তক অবস্থায় রয়েছে। মানুষ যাতে নির্ভয়ে থাকে সেজন্য সীমান্তে বসবাসকারীদের খোঁজ রাখছি।

এদিকে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপ দখল করে নিয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সরকারি সংস্থা বিজিপির সদস্যদের কেউ কেউ বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। গত দুই দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ১২৮ জনের মতো বিজিপি সদস্য এ পারে আত্মসমর্পণ করেছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কাছে। নিরস্ত্র করে সবাইকে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়। বর্তমানে বিজিপির ১২৮ জনকে হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় পালিয়ে আসা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ৬১৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন বিজিপি-সেনা এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।

ভারতে বেড়েছে মুসলিম, কমছে হিন্দুদের সংখ্যা: রিপোর্ট

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে গত ৬৫ বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমেছে। অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের সংখ্যা। ১৯৫০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ।

১৯৫০ সালে ভারতে মুসলিম ছিল ৯.৮৪ শতাংশ। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যার ১৪.১৫ শতাংশ মুসলিম। শিখ জনসংখ্যা ১.২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৮৫। বৃদ্ধির হার ৬.৫৮ শতাংশ। এছাড়া খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ৫.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে খ্রিষ্টান জনসংখ্যার হার ২.২৪ থেকে ২.৩৬ শতাংশ হয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৫০ সালে ভারতের নাগরিক ছিলেন ৮৪ শতাংশ হিন্দু। পরের ৬৫ বছরে এই চিত্রটা পালটে গেছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৮ শতাংশ কমেছে হিন্দুর সংখ্যা।

এই সমীক্ষাতে দেখা গেছে, মিয়ানমারেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে, এছাড়া হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে নেপালে। ১৬৭টি দেশের সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর ইকনমিক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল।

এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা ভারতে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এই রিপোর্ট প্রমাণ করছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা কেবলমাত্র সুরক্ষিতই নয় বরং সংখ্যার হারে ক্রমবর্ধমান।

এদিকে, ভারতেরে উল্টো চিত্র বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। এই দুই দেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা (হিন্দু) বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৮.৫ শতাংশ হিন্দু নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানে সংখ্যালঘু বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ। এই ৬৫ বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ০.২৯ শতাংশ। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিয়া

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার
মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক
ভারতে বেড়েছে মুসলিম, কমছে হিন্দুদের সংখ্যা: রিপোর্ট
নির্বাচনে হেরে গেলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাকের খালাতো ও মামাতো ভাই
শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
'পুনর্জন্ম'র প্রযোজক রূহানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক
২১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২ রানেই অলআউট
পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
সন্ধ্যার মধ্যে ৬ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস, কমবে তাপমাত্রা
ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত বেড়ে ১০০, নিখোঁজ শতাধিক
বায়ার্নকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
হজের প্রথম ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়লেন ৪১৯ হজযাত্রী
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হলেন যারা
বগি লাইনচ্যুত: ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আবু সাঈদ