বিশ্বকাপ আসর মাতাচ্ছে রাজশাহীর প্রত্যাশা
নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে একে একে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার পর যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এই বিশ্বকাপে খেলছেন রাজশাহীর অদম্য তরুণী আফিয়া হুমাইরা আনাম প্রত্যাশা। এই তরুণী এখন রাজশাহীর গন্ডি পেরিয়ে দেশের প্রত্যাশায় পরিণত হয়েছে। তার এই সাফল্যে রাজশাহী নগরীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
ডান হাতি অলরাউন্ডার আফিয়া হুমাইরা আনাম প্রত্যাশা কিছুদিন আগেও পর্দার আড়ালেই ছিল। তবে তার কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন শুধুমাত্র ক্রিকেট অঙ্গনেই নয়, নারী জাগরণের প্রতীক হিসেবেও সাড়া ফেলেছে।
সমালোচকারীদেরও অনুপ্রেরণার জায়গায় এখন প্রত্যাশা। নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তার সাফল্যমন্ডিত পদচারণায় উচ্ছ্বসিত পরিবার ও এলাকাবাসী। তাই প্রত্যাশার অর্জনে গর্বিত এলাকাবাসী মোড়ে মোড়ে লাগিয়েছেন ব্যানার- ফেস্টুন। প্রত্যাশার ছবি সম্বলিত ব্যানারের মাধ্যমে তাকে জানানো হচ্ছে শুভেচ্ছা।
রাজশাহী নগরীর স্থানীয় মাঠ কাঁপিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে জায়গা করে নেওয়া প্রত্যাশার খেলোয়াড় হয়ে ওঠার গল্পটা নিতান্তই সাদামাটা নয়। প্রতিটি মুর্হূতে প্রত্যাশাসহ তার পরিবারকেও সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে। আশপাশের মানুষের নেতিবাচক গুঞ্জন ও ব্যাঙ্গ শুনতে হয়েছে সবসময়। তবে প্রত্যাশার সাফল্যে খুশি সকলেই।
তবে এলাকাবাসী ও স্থানীয় ক্রিকেট প্রেমিদের আক্ষেপ, রাজশাহীর মেয়ে বিশ্ব টুর্নামেন্টে খেলছে। অথচ দেশের কোনো টিভি চ্যানেলে তারা সেই খেলা দেখতে পারছেন না। দেশীয় টিভি চ্যানেলে খেলা সম্প্রচারসহ স্থানীয়ভাবে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করার দাবি এলাকাবাসীসহ রাজশাহীর ক্রিকেটপ্রেমীদের।
আফিয়া হুমাইরা আনাম প্রত্যাশার মা শাবানা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে অনেক প্ররিশ্রমী। ও কখনো হাল ছাড়ে না। প্রত্যাশা যখন ছোট্ট তখন থেকেই সে শারীরিকভাবে অন্যান্য সাধারণ শিশুর চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল। তার শারীরিক গঠন ও ওজন অন্যদের থেকে কিছুটা আলাদা হওয়াসহ ক্রিকেটের প্রতি অন্য রকম ঝোঁক থাকায় অনেকেই বাজে মন্তব্য করত। আমি প্রতিবাদ করতে চাইলে, সে নিষেধ করত এবং নেতিবাচক মন্তব্যে নজর না দেওয়ার জন্য বলতো।
তিনি আরও বলেন, মেয়ে আমার আনেক সাধনার ফল। বিয়ের কয়েক বছর পর অনেক চেষ্টার পর কোলজুড়ে প্রত্যাশা আসে। এ কারণেই ওর নাম ‘প্রত্যাশা’ রেখেছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা এখন শুধু আমাদের সন্তানই নয় বরং আমাদের প্রত্যাশা এখন দেশের প্রত্যাশা, দেশের গর্ব। অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয়। ওকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন। প্রত্যাশার স্বপ্নই আমাদের স্বপ্ন। আর প্রত্যাশার স্বপ্ন ভালো ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। সেই স্বপ্ন পূরণে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন।
প্রত্যাশার বাবা আক্তারুল আনাম ববিন বলেন, ছোট্ট থেকেই আমি খেলাধুলা করি। কিন্তু বাবা সাংবাদিকতা করতেন। সে সময় সংসার চলানোই কঠিন ছিল। খেলাধুলা তো অনেক পরের বিষয়। তবে আমার স্বপ্ন আমার মেয়েও ধারণ করেছে। ও ছোট্ট থেকেই অনেক ভালো খেলে। ছেলেদের থেকেও অনেক ভালো খেলে।
তিনি আরও বলেন, তার মেয়ের এই সাফল্যের পেঁছনে তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও ত্যাগ যেমন আছে তেমনি বেশ কিছু কোচসহ অনেক মানুষের সহযোগিতা আছে। অর্থের অভাবে মেয়েকে যখন খেলাধুলা সামগ্রী কিনে দিতে পারেনি সে সময় তারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রত্যাশার বাবা বলেন, সে সময় আশপাশের মানুষ ওর ভবিষ্যতের সমস্যা নিয়ে কথা বলতো। তখন আমি ওকে খেলাধুলায় পুরোপুরি সার্পোট দেওয়া শুরু করলাম। এতে একদিকে ওর শারীরিক ফিটনেস ভালো থাকল আবার প্রত্যাশা ও আমাদের স্বপ্নও পূরণ হলো। ২০১৪ সালে ঢাকায় ফার্স্ট ডিভিশন খেলার মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে। ২০২০ প্রিমিয়ার লিগে চান্স পায়। তার পর থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা শুরু প্রত্যাশার। এখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে খেলছে। তার এই সাফল্যে আমরা সকলেই খুশি এবং প্রত্যাশার জন্য দোয়াপ্রার্থী।
এ বিষয়ে রাজশাহী যুব ক্রিকেট স্কুলের পরিচালক জামিলুর রহমান সাদ বলেন, প্রত্যাশা মাঠে যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই ম্যানেজ করতে পারে। ও মেয়ে হলে অন্য রকম জোর আছে। বুকে অদম্য সাহস আছে। এই রকম লম্বা ও গুনাবলীর মেয়ে ক্রিকেটার পাওয়া মুশকিল। প্রত্যাশার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।
এসআইএইচ