ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু, জনসচেতনতা বাড়ানোয় গুরুত্ব
রাজধানী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে প্রস্তুতি থাকা দরকার। একইসঙ্গে ডেঙ্গু রোগের মূল শক্তি এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের উপর জোর দিতে হবে। তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনের পাশাপাশি জনসচেনতার উপরে জোর দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে দুই করপোরেশনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিয়মিত টেলিভিশন ও পত্রিকায় সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। কারণ ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধির বেশির ভাগ কারণই হলো মানুষের তৈরি। তাই আমরা মনে করছি সচেতনতা আমাদের অনেকাংশেই মুক্তি দিতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৫২৭ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৪৬ জন রোগী। যদিও চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখনো কারও মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
রবিবার (১২ জুন) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই ২৪ জনের ২৩ জনই ঢাকার।
আগের দিন অর্থাৎ শনিবার (১১ জুন) আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ঢাকারই ১৯ জন রোগী।
শুক্রবার (১০ জুন) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সবাই ঢাকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, নতুন ২৪ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ জনে। তাদের মধ্যে ৮১ জনেই ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
লার্ভা ধ্বংস করার পাশাপাশি জোর সচেনতায়
এডিশ মশার লার্ভা ধ্বংসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বিভিন্ন ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভবনে দুই সিটি করপোরেশনই নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মেয়রও সচেনতামূলক কার্যক্রমের উপর জোর দেন।
সভায় উপস্থিত আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রতিনিধিকে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, রিহ্যাব যেসব ভবন নির্মাণ করে সেগুলোর সেফটি ট্যাংকসহ নানা স্থানে এডিস মশার লার্ভা বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ থাকে। এগুলো ঠিক করতে হবে। রিহ্যাব সদস্যদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে বলেন মেয়র। না হলে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সভায় উপস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মেয়রকে বলেন, সচেতনতার জন্য বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এসময় মেয়র ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিকে জানান, এ ব্যপারে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে ডিএসসিসির কথা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষকে সচেতন করতে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিগুলো এলাকাবাসীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করছে।
এর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেও চলছে সচেনতামূলক কার্যক্রম। এক্ষেত্রে পত্রিকা ও টেলিভিশন নিয়মিত বিজ্ঞাপন চলছে।
নগরবাসীকে সচেতন করতে নিয়মিত পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। এসব সভায় তিনি নাগরিকদের বোঝাচ্ছেন ডিএনসিসির একক প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সচেতনতার বিকল্প নেই।
জাহাঙ্গীরনগনর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মশার পরিমাণ বেশি। এটি চলতি বছরে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার আশঙ্কার একটি কারণ। এজন্য আসলে লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি জনসচেতনতারও কোন বিকল্প নাই।
আরইউ/এনএইচবি/এএস