কেমন আছেন রসিকের বর্ধিত এলাকার মানুষ?
রংপুর সদর উপজেলার দশ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রংপুর সিটি করর্পোরেশন এলাকায় যুক্ত হয় নতুন ১৮টি ওয়ার্ড। এগুলো এখনও পুরোপুরি গ্রাম রয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে ধান ও আলুর চাষ। মূল সড়ক বাদে বাকিগুলো কাঁচা রাস্তা। সড়ক বাতির জন্য খুঁটি বসানো হলেও তাতে দেয়া হয়নি সংযোগ। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই বঞ্চিত এলাকার মানুষদের। এক কথায় উন্নয়নের শোয়া থেকে এখনো বাহিরে রয়েছে এখানের মানুষেরা।
রংপুর সদর উপজেলার ১০টি এবং কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার একটি করে ইউনিয়ন ২০১২ সালের ২৬ জুন ৩৩ টি ওয়ার্ডের ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে রংপুর সিটি করর্পোরেশন যাত্রা শুরু করে। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথম আর দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১৭ সালে।আগামী ২৭ ডিসেম্বর এবার তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বঞ্চিত এলাকার বাসিন্দারের দাবী,নগরীর বর্ধিত এলাকাগুলোতে পৌঁছায়নি সাপ্লাই পানি ও হয়নি পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। যত্রতন্ত্র ময়লা আবর্জনা। ইউনিয়ন পরিষদে থাকাকালে বর্ধিত এলাকায় দরিদ্ররা কাবিখা, কাবিটা, টিআরসহ নানা সহায়তা পেত সিটি হওয়ায় সেগুলোও বন্ধ রয়েছে।
নগরীর বাসিন্দা বলছেন দুই মেয়রের আমলে মূল শহরে চার লেনসড়ক, মূল নগরীর পাকা সড়ক সংস্কার, আধুনিক কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নগর মাতৃসদন, ব্রিজ-কালভার্ট, আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। তবে, মূল নগরীর বাইরে পৌঁছায়নি নাগরিক সেবা। অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচা সড়কগুলো পাকা হয়নি, যেগুলো হয়েছে সেগুলো সংস্কার হয়নি, পিচ উঠে খানা-খন্দ হয়েছে।
নামেই সিটি করপোরেশন হলেও এখনো ইউনিয়ন পরিষদের মতোই বাস করেন তারা। সন্ধার পরেও পল্লী বিদ্যুতের ভেলকীবাজিতে অতিষ্ট ওই এলাকার বাসিন্দারা।
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারণায় কোনো উত্তাপ নেই। হাট-বাজারে চায়ের দোকানে কিছুটা আলোচনা হচ্ছে, তা স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। মেয়র পদ নিয়ে যেন ভাবনা নেই কারো।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, শহরের মানুষকে ভোট দিয়ে মেয়র বানালে তারা তো বর্ধিত এলাকার দিকে ফিরে চান না। তেমন কোন উন্নয়ন হয় নাই। তাই মেয়র যে হয় হোক, কাজ আনতে পারবেন, গ্রামের উন্নয়ন করতে পারবেন এলাকার মানুষকে শান্তিতে রাখতে পারবেন এমন কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করতে চায় তারা।
সিটি করর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড বর্ধিত এলাকা। এর মধ্যে নগরীর ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের মূল সড়ক পাকা হয়েছে। রাস্তার ধারে আবাদি জমি। ড্রেন হয়নি। সড়কের পাশে সড়ক বাতির জন্য খুঁটি বসানো আছে। সেগুলোতে সংযোগ হয়নি। একই অবস্থা নগরীর ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডও।
জগদীশপুর, বক্তারপুর, পশ্চিম ও পূর্ব গিলাবড়ি, রথিরামপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়ক পাকা হয়েছে। চলাচলে লোকজনের অসুবিধা নেই। কিন্তু পয়োনিষ্কাশন নালা ও বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পুরো এলাকার গ্রামীণ পরিবেশ। চারদিকে শুধু আবাদি জমি।
নগরীর ৩১,৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড পুরনো তামপাট ইউনিয়ন পরিষদ। সিটি করপোরেশন হলেও সেখানকার অবস্থা এখনো ইউনিয়ন পরিষদের মতো। সিটি হওয়ার পর শুধু মূল সড়ক হয়েছে। অন্যান্য সড়ক পাকা না হওয়ায় বর্ষাকালে কর্দমাক্ত পথে এক রকম অবরুদ্ধ থাকেন তারা। তবে সড়ক বাতির জন্য খুঁটি বসানো হয়েছে।
সিটি করর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর একটা কাজ ভালো হয়েছে সেটা হলো জমির দাম বেড়েছে। নগরীতে বহু মানুষের নতুন নতুন বাসা বাড়ি হয়েছে। ধানি জমি, খাল-পুকুর ভরাট করে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। ফলে বাড়িতে ব্যবহূত পানি যাওয়ার জায়গা নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
৩৩ নম্বর এলাকার রঘু বাজার এলাকার বাসিন্দা মোজাহার হোসেন বলেন, কিসের সিটি করপোরেশন? একনা বিস্টি ( বৃষ্টি) হলেই পানিত তলে যায়। পানি যাওয়ার রাস্তা নাই। ভোট আইসে ভোট যায়, এলাকার কথা কেউ মনে রাখে না। একই সুরে কথা বলেন নুর হোসেন। তিনি বলেন, আপনারাই দেখে যান এটা সিটি না অন্য কিছু। সিটি হলে রাস্তা ঘাট এমন হয় নাকী। কেউ তো এই রাস্তা ঠিক করে না। ভর্সা হইলে হাটা যায় না। ভ্যানোত করি ধান পাট আনা নেওয়া করা যায় না।
তিনি বলেন, আমার এলাকাত পুরনো পল্লী বিদ্যুৎ। সন্ধার পর থাকে না। আর শহরোত বিদ্যুৎ যায় না। তাইলে আমারগুলের জন্য আলাদা আর শহরের মানুষের জন্য আলাদা লাইন?
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩০, ৩২, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নাজমুন নাহার জানান, আমি দুই টাইমে ছিলাম। আসলে খুব এটা কাজ করতে পারি নাই। সড়কগুলো করা হয়েছে। আরো করা হচ্ছে। যতটুকু সম্ভব নাগরিক সেবা দিচ্ছি।
রংপুরের সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, শহরের পরিধি বাড়ছে। কিন্তু পরিকল্পনা বাড়ছে না। পরিকল্পিত নগর হচ্ছে না। এজন্য সমবন্ঠন প্রয়োজন। শুধু পুরনো শহরকেই নগর ভাবলে চলবে না। নজর দিতে হবে বর্ধিত এলাকাগুলোতেই।
রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সিটির বয়স দশ বছরে। আমি গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। যতটুকু দৃশ্যমান উন্নয়ন সেটা আমার আমলে হয়েছে। আমি প্রতিটি ওয়ার্ড অসংখ্য বার গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কথা শুনেছি, বরাদ্দ দিয়েছি। অনেক অনেক উন্নয়ন করেছি। অনেক কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলোও করা হবে।
এএজেড