দুর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যানের প্রতি ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
ঠাকুরগাঁও সদরের ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন ওই ইউনিয়নের ১২জন ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা। ইউপি সদস্যদের মতামতের তোয়াক্কা না করে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই সব কাজ নিজে করা এবং মূল্যায়ন না করায় ইউপি সদস্যরা বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বর্জন করে আসছিলেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় ওই ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা , প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফের খাদ্য বিতরণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ওই ইউনিয়নের ৯জন ইউপি সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ৩ নারী সদস্যকে বাদ দিয়ে নিজেই সবকিছু স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সম্পাদন করে আসছেন।
ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই সাব-রেজিস্ট্রি থেকে জমিজমা বিক্রির ১ শতাংশ কমিশন হিসেবে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প নিলেও এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো নলকূপ বসানো হয়নি।
ইউপি সদস্য কার্তিক চন্দ্র, ঈমান আলী অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের না জানিয়েই সব সিন্ধান্ত নেন। আমাদের কোনো মূল্যায়ন করেন না। বরাদ্দের টাকার বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি নন, সেটি তার ব্যক্তিগত দাবি করে আমাদের প্রত্যাখান করে আসছেন। সেজন্য আমরা ১২জন মেম্বার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে এডিবির ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারদের না জানিয়ে নিজের পছন্দের লোকজনের মাঝে ৩০টি স্প্রে মেশিন বিতরণ করেন। কাবিখা (টিআর) প্রকল্পের ৪৭ হাজার টাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের বাউন্ডারি করার প্রকল্প গ্রহণ করলেও অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরাদ্দের অর্থ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেন। দরিদ্র লোকজনের মাঝে ১ হাজার ৫০টি টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হলেও মালামাল উত্তোলনের সময় উপকারভোগীর কার্ড চেয়ারম্যান তার নিজ হেফাজতে রেখে দেন।
খবর না পাওয়ায় যারা মালামাল উত্তোলন করতে পারে না চেয়ারম্যান তাদের বরাদ্দের মালামাল উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রি করে দেন। এমন ৫৫টি প্যাকেজ অন্যত্র বিক্রির সময় ধরা হলেও চেয়ারম্যান বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নে ননওয়েজ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে সন্নাসীপাড়া এলাকায় একটি ড্রেন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পাইপ দিয়ে নামকাওয়াস্তে কাজ সম্পাদন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় বোনাস হিসেবে ওই ইউনিয়নে ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো মেম্বারকে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে হোল্ডিং নম্বর বিতরণ করা হয়। হোল্ডিং প্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়। মোট টাকার শতকরা ২০ শতাংশ ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়ে নেন। কতটি হোল্ডিং খোলা হয়েছে তার হিসাব নেই ইউপি সচিবের কাছে।
ইউপি সচিব হরিগোপাল সেন বলেন, সারা ইউনিয়নে কতটি হোল্ডিং খোলা হয়েছে এর কোনো হিসেব নেই আমার কাছে। আর আদায়কৃত অর্থের হিসেবও নেই।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ঢোলাহাট ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৫টি কার্ড রয়েছে। অতিদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে চাল দেওয়া হয়। মৃত ও এলাকায় থাকেন না এমন প্রায় শতাধিক কার্ড পরিবর্তন করা হলেও কোনো মেম্বারকে স্ব স্ব ওয়ার্ডের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও মেম্বাররা স্ব স্ব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কোনো কাজে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এমন অবস্থায় বেশ কিছুদিন ধরে মেম্বাররা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বর্জন করে আসছেন। এরপরও চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়ের বোধোদয় না হওয়ায় ৯ ইউপি সদস্য ও ৩ নারী সদস্য শুক্রবার (১৯ আগস্ট) জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যপারে ইউপি চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কতিপয় মেম্বার বিভিন্ন কাজ-কর্মে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি প্রতিবাদ করায় কয়েকজন মেম্বার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহাবুবর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বাররা অনাস্থা এনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হবে।
এসজি/