ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া ঘাট, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথ। আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে রাজধানীবাসীর। করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায়, গত দুই বছরের তুলনায় এবার নৌ-পথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপও থাকবে বেশি।
ফলে পাটুরিয়া -দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌ-পথে যাত্রী ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে, সময়ও লাগছে দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে প্রতিদিন গড়ে ছোট-বড় মিলে ৪ হাজার গাড়ি পারপার হয়। ১৭-১৮টি ফেরি সচল থাকলে এসব গাড়ি ফেরি পারাপারে কোনো সমস্যা হয় না। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে ঘাটগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ে কয়েক গুণ।
ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমিয়ে বাড়তি গাড়ির চাপ সামলাতে ঈদের আগে ও পরে ৩ দিন করে ৬ দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল ও পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে। তবে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে সিথীলতা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে ১৯টি ফেরি চলাচল করে এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে তিনটি ফেরি চলাচল করে। দু’এক দিনের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে দু’টি ফেরি যুক্ত হলে মোট হবে ২১টি। আর আরিচা-কাজিরহাট নৌ-পথে আনা হবে একটি ফেরি।
তিনি বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের মোট ৫টি পন্টুন এবং এসব পন্টুনে মোট ১৩টি পকেট আছে। বর্তমানে ৪টি পন্টুনের ১১টি পকেট চালু আছে। ২ নম্বর পন্টুনটি বন্ধ থাকায় ২টি পকেট দিয়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা বন্ধ আছে। তবে ঈদের আগে বন্ধ থাকা এই পন্টুনটিও চালু থাকবে। আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের মানিকগঞ্জের আরিচা ফেরিঘাটে ২টি পন্টুনের ৪টি পকেট দিয়েই ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করতে পারছে।’ এ দুটি নৌপথে ২২টির পরিবর্তে ২৫টি ফেরি সচল রাখতে পারলে ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের যাত্রী পারাপারের জন্য ৩৩টি লঞ্চ প্রস্তুত আছে। দিনে ও রাতে নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপারের জন্য জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামসহ নিরাপদে লঞ্চ চলাচলের সব প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দী।
তিনি জানান, যাত্রীদের চাপ অনুযায়ী এ দুই নৌপথে লঞ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কোনো যাত্রী লঞ্চঘাটে এসেই যেন পার হয়ে যেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে। আকারভেদে প্রতি লঞ্চে ১৮০ থেকে ২০৮ জন যাত্রী নিয়ম অনুযায়ী উঠতে পারবেন।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা হয় সে জন্য আনসার ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করছে। ঈদের আগে ও পরে গাড়ির চাপ আরও বেড়ে গেলে মহাসড়কে তীব্র যানজট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের ১৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার ডেডিকেটেড সার্ভিস লেন, ৩ দশমিক ২৭ কিলোমিটার মূল মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, হার্ড শোল্ডার নির্মাণ, ৭১ দশমিক ২২ কিলোমিটার পেভমেন্ট সার্ভিসিং, ৮০টি নিরাপদ অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ট্রাক রেস্ট এরিয়া নির্মাণ, আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ, বেইলি সেতু ও ফুটপাত নির্মাণ কাজ ২০২১ সাল থেকে শুরু হয়ে চলমান আছে। ২০২৩ সাল নাগাদ এ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের গোলড়া, মানিকগঞ্জ, বানিয়াজুরি, ফলসাটিয়া, টেপড়া ও উথলী বাসস্ট্যান্ড এবং উথলী থেকে পাটুরিয়া-আরিচা সংযোগ মোড় পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলতে দেখা গেছে। ফলে মহাসড়কের এসব স্থানে লোকাল ও দূরপাল্লার গাড়ি সবাইকে একই লেন ব্যবহার করতে হচ্ছে। মহাসড়কের গাড়িগুলো চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা না করলে, ঈদযাত্রায় তীব্র যানজট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) কেএম মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কের বিভিন্ন স্টপেজ এলাকার উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। ঈদের আগে মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ না হলে যানজটের সৃষ্টি হবে।’
পুলিশ সদস্যরা শতভাগ সচেষ্ট থাকলেও, যানজট নিরসন করা কষ্টসাধ্য হবে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গাউস-উল-হাসান মারুফ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের যেসব স্থানে এক লেন ব্যবহার হচ্ছে, ঈদের আগেই ওইসব স্থানের কাজ সম্পন্ন হবে। আশা করি. ঈদের ৭ দিন আগে থেকেই মহাসড়কের সব স্থানে সব লেনে গাড়ি চলতে পারবে। গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না।
এমএসপি