বিচারকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, মামলা গ্রহণের শুনানি রবিবার
যৌতুকের কারণে নির্যাতনের অভিযোগে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-২ এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকারের মামলার আবেদনের শুনানির দিন পেছাল। মামলার শুনানির দিন রবিবার (২৪ এপ্রিল) ধার্য করেছেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার(২১ ফেব্রুয়ারী) রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে আদালত শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৪ এপ্রিল ধার্য করেন বলে নিশ্চিত করেছেন হৃদিতা সরকারের আইনজীবী বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে মামলার আবেদনটি করেন হৃদিতা সরকার।
মামলার আসামিরা হলেন-রংপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালত-২ এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। সকলের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার পূর্ব বাজার এলাকায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ন সরকারের মেয়ে চিকিৎসক হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়। ওই দিন বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার নগদ কনে পক্ষের কাছে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিবাহ সম্পন্ন হয়। কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। বিয়ের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেটকার ক্রয়ের জন্য তার স্ত্রী হৃদিতা সরকারের ওপর ৩০ লাখ টাকার চাপ সৃষ্টি করেন। হৃদিতা সরকার তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোনা হয়ে রংপুর জজশীপে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকিয়া ও মাদক সেবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সন্তানের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন আসামি। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসামি দেবাংশু কুমার সরকার।
এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ৩০ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৮ মার্চ হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাত কিছু দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৭ এপ্রিল রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানায় এজাহার করতে গেলে আসামি বিচারক হওয়ায় থানা থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। পরে আদালতের শরনাপন্ন হন হৃদিতা সরকার।
এসআইএইচ