অপরিকল্পিত ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া
৩০০ বিঘা জমির আধাপাকা ধান পুড়ে কৃষকের সর্বনাশ!
স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিল কৃষকরা। মাত্র দু’সপ্তাহ পরেই আনন্দ উৎসবে স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতো তারা। কিন্তু সেই স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়েছে একটি অপরিকল্পিত ইটভাটা।
ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় কমপক্ষে ১০০ একর (৩০০ বিঘা) জমির আধাপাকা ধান পুড়ে যাচ্ছে। ধান নষ্টে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ১১৫ জন কৃষক দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়নের গৌরিশ্বর এলাকায়। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করেছেন এমএসটি ভাটার মালিক ফজলুল হক।
এদিকে, ধান পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় গৌরিশ্বর ছাড়াও বিল গৌরিশ্বর ও দশ আনি বকশিয়াসহ তিন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও’র) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশে বোরো ধান চাষ। তার মাঝে ইটভাটা। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আধাপাকা ধান কালচে রঙ ধারণ ও পাতাগুলো লালচে হয়ে গেছে। যার ফলে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গৌরিশ্বর গ্রামের কৃষক মজনু বলেন, ১০ হাজার টাকা সুদের উপর টাকা ধার নিয়ে বর্গায় জমি চাষ করছি। এখন আমি এ টাকা কেমনে শোধ করব? আমার সমস্থ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মামুন মিয়া বলেন, ৫ পাকি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে ৬০ হাজার টাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, এ ছাড়া ইটভাটার পাশেই রয়েছে দুই মাদরাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি মসজিদ। ওই ইটভাটার কালো বিষাক্ত ধোঁয়ার ফলে স্থানীয় লোকজনদের মাঝেও দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ।
এ নিয়ে ইটভাটা বন্ধে ভাটার মালিক ফজলুল হককে বার বার জানালেও তিনি কোনো তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় লোকজন।
তবে এমএসটি ভাটার মালিক ফজলুল হক তালুকদার জানান, কৃষকের ধান নষ্ট হওয়ার ঘটনা সঠিক। তবে এটা ভাটার কারণে না পোকার আক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না। ইটভাটার কারণে ধানের ক্ষতি হলে প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মিলন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমার কাছে আসছিল। তাদের নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছি। আশা করি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দ্রুত প্রতিকার পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী জানান, ভুক্তভোগী কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএসপি