নেত্রকোনায় হাওরে ২১ শতাংশ ধান কাটা বাকি
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার ধনু নদের পানি বাড়তে থাকায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ব্যাপক চাপ পড়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা বাঁধ রক্ষার কাজ তদারকি করছেন। ফলে কীর্তনখোলা বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যায়নি।
জেলার এসব হাওরে ৭৯ শতাংশ বোর ধান ইতোমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে বলে আজ শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোবারক আলী হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, আগাম পূর্বাভাসের কারণে হাওরের ৭৯ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তবে এখনও ২৮ শতাংশ ধান কাটা অনেক বাকি। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে বাজারে ধান বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর নেত্রকোনায় প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধান আবাদ হয়েছে। এ বছর হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ মেট্রিকটন বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর জেলায় ১১ লাখ ৬ হাজার ৭৩০ মেট্রিকটন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিঘাপ্রতি ন্যূনতম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ মণ পর্যন্ত বোরোর ফলন হয়। এক বিঘায় গড়ে ১২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এর মধ্যে বীজ ১ হাজার ২০০ টাকা, চাষ ৬০০ টাকা ও বপন দুই হাজার টাকা, সার ও পানি ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ধান কাটা ২ হাজার টাকা ও মাড়াই ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে জমি পত্তন নিলে তারও খরচ আছে।
তাদের নিজের শ্রমের মজুরিও রয়েছে। এবার ধানের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি মণ এক হাজার ৮০ টাকা। সে অনুযায়ী ২০ মণের দাম আসে ২১ হাজার ৬০০ টাকা। খরচ বাদে হাতে থাকার কথা ৭ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু আগাম বন্যার ভয়ে আধাপাকা ধান কাটায় ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি বাজারমূল্য কম থাকায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, বাঁধে পানির ব্যাপক চাপ পড়েছে। ফলে কীর্তনখোলা বাঁধের ছয়টি অংশে নতুন করে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে চারটি অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিক বাঁশ, কাঠ, চাটাই, খড়, মাটি, বালু ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করা হয়েছে।
খালিয়াজুরির ইউএনও এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাত-দিন বাঁধে অবস্থান করে বাঁধ রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন বেশির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
খালিয়াজুরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, হাওরে ১৪০ থেকে ১৫০ দিনের লাগানো ধান সব কাটা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি জাতের ধান এখনও খেতে আছে। এসব ধান আধা-পাকা অবস্থায় আছে। এ বছর খালিয়াজুরির ছোট-বড় ৮৯টি হাওরে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, কৃষকরা যাতে নিজের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য আমরা রাত-দিন চেষ্টা করে হাওরের বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। ১৬ দিন ধরে আমরা পর্যায় ক্রমে বাঁধে অবস্থান করছি। বাঁধে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এজন্য মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত হাওরের প্রায় ৭২ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে।’
খালিয়াজুরির আমানতপুর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, ‘এখনও বাঁধ টিকে আছে, এইডাই আমরার বড় শক্তি ও সাহস। এইবার সময়মতো শক্তিশালী বাঁধ দেওনে ফসল রক্ষা পাইতাছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের লোকজন সবসময় বাঁধে থাকনে এহনো বাঁধ আছে।’
এসএন