লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
লালমনিরহাটে জুয়া খেলার অভিযোগে বৈশাখী মেলা থেকে আটক হওয়া রবিউল ইসলাম খাঁন (২৫) পুলিশ হেফাজতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে এবং পুলিশের গাড়ি অভিযোগও উঠেছে।
এর আগে বৈশাখী মেলা থেকে রবিউল ইসলাম খাঁন (২৫) ও শ্রী পোল্লাদ মেকারকে (৪০) আটক করে পুলিশ। এরপর পুলিশ হেফাজতে রবিউলের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর হাসপাতালে আসেন নিহতের স্বজনরা। এদিকে এ ঘটনায় জেলার মহেন্দ্রনগরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এসময় অবরধকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকার চর্কেরথান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রবিউল ইসলাম খাঁন সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের কাজীরচওড়া এলাকার দুলাল খানের ছেলে। এ ছাড়া পোল্লাদ রায় দক্ষিণ হিরা মানিক এলাকার মৃত রসনি চন্দ্রের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বৈশাখী মেলা চলছিল। এসময় সেখানে কিছু জুয়াড়ি ডাবু (ছয়গুটি) জুয়া খেলা বসালে সেখানকার এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেয়। পরে সেখানে পুলিশ এসে জুয়াড়িদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মেলায় ঘুরতে আসা শ্রী পোল্লাদ মেকার ও রবিউল ইসলাম নামে দুইজনকে আটক করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান,পুলিশ আটক দুজনকে ভ্যানে উঠানোর চেষ্টা করলে রবিউল ভ্যানে উঠতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশ তাকে বেদম মারধর করে। এতে রবিউল সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে পুলিশ তাকে পাজা কোলা করে তাদের ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের নির্যাতনের কারণেই রবিউল অসুস্থ হন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন স্বজনরা।
পুলিশের নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই রবিউলের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন। পুলিশ নিজেদের দোষ এড়াতে রবিউলের মৃত্যুর পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়।
নিহতের চাচা মনসুর আলী জানান, রবিউল জুয়ার সঙ্গে জড়িত নয়। বৈশাখী মেলা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। মেলার পাশে জুয়া চলছিল। পুলিশ জুয়াড়ি ধরতে ধাওয়া করে এবং জুয়াড়িরা পালিয়ে যায় আর মেলায় ঘুরতে যাওয়া রবিউলসহ দুজনকে আটক করে। তাদের থানায় নিয়ে যেতে চাইলে রবিউল পুলিশের ভ্যানে উঠতে না চাওয়ায় পুলিশ তাকে বেদম মারধর ও লাথি মারে। এতে রবিউল মাটিতে পড়ে যায়। পুলিশের নির্যাতনই রবিউলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে রবিউলের মৃত্যুর খবরে রাত ২টার পর থেকে উপজেলার মহেন্দ্রনগরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। সড়ক অবরোধকারীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নির্যাতনকারী পুলিশকে দ্রুত আইনের আশ্রয়ে আনার দাবি জানান।এসময় তারা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে ভোর ৪টার দিকে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, মেলায় জুয়া চলছে এমন খবরে পুলিশ অভিযান চালায় এবং দুজনকে আটক করে। তাদের থানায় আনার সময় একজন অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসার জন্য সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক অসুস্থ ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে অবস্থা আরও খারাপ হলে আবারও তাকে ডাক্তার দেখানো হয় এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসএন