প্রাইভেট না পড়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে
বরগুনার বেতাগীতে তার কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ১৪-১৫ জন শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আবদুল মান্নান।
এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছয় শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়াও বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭-৮ জন শিক্ষার্থী।
রবিবার (১০ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন আহত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন তারা। তবে ওই শিক্ষকের দাবি, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে দুষ্টুমি করায় পিটিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত বুধবার বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শ্রেণিকক্ষে গণিত বই না আনায় দশম শ্রেণির ছয় ছাত্রীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন ওই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আবদুল মান্নান। এ ছাড়া আরও ৭-৮ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয় আহত করেন তিনি। পরে আহত ছয় ছাত্রীর অভিভাবকরা এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বাকিদের বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আহতরা হলেন- বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া, আরাবি, জান্নাতুল ফেরদৌস, তুলি, নাদিরাসহ আরও ৭-৮ জন। এ ঘটনায় বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
ছাত্রীদের অভিভাবকরা আক্ষেপ করে বলেন, মেয়েদের শরীরে এভাবে কোনো শিক্ষক আঘাত করে জানা ছিল না। এ ছাড়া দশম শ্রেণির ছাত্রীরা তো ছোট না যে চাইলে হাত তোলা যায়। শরীরের এমন কোনা জায়গা নেই যেখানে পেটানোর দাগ না আছে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা ফোরকান আকন বলেন, আমার মেয়ের শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যে ওই শিক্ষক না পিটিয়েছেন। বড় মেয়েদের শরীরে এমন ভাবে কেউ আঘাত করে? কোনো শিক্ষক যদি পাগল না হয়ে যান তবে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের গরুপেটা করতে পারেন না। আমি অভিভাবক হিসেবে এমন শিক্ষকের বিদ্যালয়ে থেকে অপসরণের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থী মারিয়ার বড় ভাই মো. বিপ্লব বলেন, আমার বোনের হাতটাই ভেঙে দিয়েছেন শিক্ষক মান্নান। এমন যদি শিক্ষক হয় তবে জাতি তাদের কাছ থেকে কেমন শিক্ষাদান আশা করবে। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে এমন কর্মকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই।
আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে স্যার ক্লাসে আলাদা শিট দিয়ে গণিত পড়ান। তাই কেউ গণিত বই আনেনি। তবে স্যারের কাছে যারা প্রাইভেট পড়েন এবং তার বাড়ির কাছের, তাদের পেটাননি। বাকিদের ইচ্ছেমতো পিটিয়ে আহত করেছেন। সহপাঠী নাদিরাকে তো অজ্ঞান অবস্থায়ই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরাও অনেক দুষ্টু। ওরা দুষ্টুমি করেছে তাই পিটিয়েছি। এ ছাড়া রোজা-রমজানে ওই সময় মাথা ঠিক ছিল না।
বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এবিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বেতাগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন