সুনামগঞ্জে একের পর এক বাঁধ ভাঙছে
সুনামগঞ্জে একের পর এক ভাঙছে বাঁধ। তলিয়ে যাচ্ছে হাওরপাড়ের কৃষকের সবুজ সোনা। সবশেষ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে আরও একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১০০ একর বোরো ফসল।
এদিন উপজেলার এরাইল্লা কোনা মনদিয়াতা বাঁধটি ভেঙে গিয়ে এ ফসলহানির ঘটনা ঘটে। গত এক সপ্তাহে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা ও দিরাই উপজেলায় অন্তত ১০টি হাওরে ফসল ডুবে গেছে। বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও নতুন করে একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বোরো ফসলের ক্ষতি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জেলার ১১টি উপজেলায় ফাটল দেখা দেওয়া বাঁধগুলো দিন-রাত পাহারায় রেখেছেন হাওর পাড়ের মানুষেরা।
স্থানীয় কৃষক জলিল মিয়া বলেন, আমরা একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। সরকার শতকোটি টাকা বরাদ্দ দেয় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য। কিন্তু সে টাকা দিয়ে পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সদস্যরা ঠিকমতো কাজ করেন না।এবার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ঠিকমতো কাজ করলে পানিতে বাঁধ ভাঙতে না।
ফারুক আহমেদ নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘এ দুর্বল বাঁধ নির্মাণ করায় আমাদের হাওরের রক্ষা হয়নি। ডুবে যাওয়া এ হাওরে আমার জমি আছে। আসলে নানা জায়গায় অপ্রয়োজনে বাঁধ হলেও প্রয়োজনীয় জায়গায় হয়নি। ক্ষতি আমাদের হলো আর সরকারি স্যারেরা এসির নিচে বইয়া বইয়া আমাদের হাহাকার দেখতেছেন, কৃষকের কষ্ট কেউ বুঝলেন না।’
এ ছাড়া জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়ও নিম্নমানের বেড়ি বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষকরা জানান, বালুমাটি দিয়ে নিম্নমানের বেড়িবাঁধ সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে পড়ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢলে স্থানীয় নলজুড় নদীর পানিতে ভরে হাওরের বেড়ি বাঁধগুলোতে চাপ সৃষ্টি করছে। যেকোনো সময় বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এলাকার একাধিক কৃষকের অভিযোগ, প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিকে তাড়াহুড়ো এবং সরকারি নিয়ম না মেনে বালুমাটি দিয়ে নিম্নমানের বেড়িবাঁধ করা হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টি ও অকাল বন্যায় বাঁধগুলো ধসে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। নামমাত্র ও দায়সারা কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। কোনো জবাবদিহি না থাকায় এসব কাজের ধারা নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও ক্ষোভ জানান তারা।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবীর বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে যে বাঁধটি ভেঙেছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের না। আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন শেষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরাঞ্চলে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। একেক এলাকা একেক রকম মাটি রয়েছে, ভিন্নতার আলোকে সমস্যা চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাওর রক্ষা বাধেঁর সমাধান করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাঁধ নির্মাণে পিআইসির অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এসএন