বরগুনা কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ
বরগুনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের হাতে ইনকোর্স ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর থাকায় তিনি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষ ও প্রাইভেটে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি এবং ছাত্রদের দিয়ে নিজের বাসার বাজার করিয়ে নেন।
বুধবার (৬ এপ্রিল) ওই কলেজের বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র এনামুল হক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
লিখিত অভিযোগে এনামুল হক উল্লেখ করেন, বাংলা বিভাগের শিক্ষক অমর দাসের কাছে আমরা গোটা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীর এক প্রকার জিম্মিদশায় আছি। তার হাতে থাকা ভাইবা ও ইনকোর্সের মার্কসের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নানা প্রকার অনৈতিক আবদার করেন। বিশেষ করে, ভাইভায় মার্কস দেওয়ার জন্য তিনি অর্থ দাবি করেন। গরীব অসহায় শিক্ষার্থীরা কেউ টাকা না দিলে তাদের সর্বনিম্ম মার্কস দেয়ার ভীতি প্রদর্শন করেন। একইভাবে ফুল মার্কস দেওয়ার বিনিময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাজার সওদা করানো, পোশাক কিনে দেওয়ার আবদার করছেন।
এনামুল বলেন, স্যার বিভিন্ন সময়ে তার ব্যক্তিগত কাজে আমাদের ব্যবহার করেন। ভাইভা ও ইনকোর্স নাম্বারের দোহাই দিয়ে আমার কাছ থেকেও অমর স্যার একাধিকবার ইলিশ মাছ, কৈ মাছ, দেশি মুরগীসহ বাজার-সওদা করিয়ে নিয়েছেন।
এ ছাড়া তিনি কলেজের ভেতরে যে কক্ষটিতে থাকেন, ওই কক্ষের খাট ভেঙে যাওয়ায় গভীর রাতে ডেকে নিয়ে খাট মেরামত পর্যন্ত করিয়েছেন। একইভাবে তিনি আমাদের ডিপার্টমেন্টে প্রায় সব ছাত্রকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বাজার সওদা করে খাওয়ানোসহ নানা কাজে বাধ্য করিয়েছেন।
গণমাধ্যমের হাতে আসা একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, শিক্ষক অমরচন্দ্র কলেজের বিপরিতে একটি বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে পেছনের দিকে বসেন। এ ছাড়া ক্লাস চলাকালীন একজন ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন শিক্ষক অমর চন্দ্র।
একইভাবে একজন ছাত্রী স্যারের এমন আচরণের বিষয়ে সহপাঠির সাথে কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড, একজন ছাত্রকে মাছ ও খাসির মাংস কিনে নিয়ে আসার কয়েকটি কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সরবরাহ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ভিডিও দেখানোর পর ওই কলেজের বাংলা বিভাগের সরকারি অধ্যাপক শীরিন সুলতানা নিশ্চিত করেন ওই ভিডিওর ব্যক্তিটি বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের।
শিরীন সুলতানা বলেন, আমার কাছেও স্যারের এমন আপত্তিকর আচরণের বিষয়ে অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু ছাত্রীদের ডেকে জিজ্ঞেস করলে তারা অস্বীকার করেছিল।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের এক ছাত্রী জানান, তিন-চার মাস আগে বৃষ্টির মধ্যে একদিন প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় পেছনের বেঞ্চে বসায় স্যার তাকে ডেকে সামনে সারিতে নিয়ে বসিয়ে শরীর স্পর্শ করে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। পরে ক্ষোভে-ঘৃণায় তিনি চলে আসেন এবং তারপর থেকে আর প্রাইভেট পড়তে যাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা বিভাগের বেশকিছু শিক্ষার্থী জানান, অমর স্যার শিক্ষার্থীদের নাম্বার জিম্মি করে প্রাইভেট পড়ানোয় বাধ্য করেন। তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে এভাবেই বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছেন। স্যারের হাতে নম্বর থাকায় কেউ কিছু মুখ খুলে বলছে না। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে সর্বনিম্ন মার্কস দেওয়া, এমনকি ফেল করানোর পর্যন্ত হুমকি দিয়ে থাকেন।
কয়েকজন ছাত্রী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মুঠোফোনে জানান, শিক্ষক অমর চন্দ্র ইনকোর্স ও ভাইভায় ফুল মার্কস দেওয়ার বিনিময়ে তাকে 'বিশেষ সময়' দেওয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রাইভেট পড়ানোর সময় তিনি একাধিক ছাত্রীকে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার মতো যৌন হয়রানি করে আসছেন। ছাত্রীরা লজ্জা ও মার্কস না পাওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
একজন ছাত্রী জানান, শুধু প্রাইভেটেই না, শ্রেণিকক্ষেও তিনি আমাদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন এবং গায়ে হাত দেন। আমরা খুবই বিব্রতবোধ করি। কিন্তু লজ্জায় কাউকে বলতে পর্যন্ত পারি না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অমর চন্দ্র বলেন, এ সবই মিথ্যে অভিযোগ। অনিয়মিত কিছু ছাত্র ভাইভা ও ইনকোর্সে ফুল মার্কস দেওয়ার জন্য আমায় চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু ফলাফল অনুসারে আমি মার্কস দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে বিষোদগার করছে। আমি বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানিয়েছি।
যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি উঠে বের হয়ে যেতে যেতে বলেন, আপনারা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে কথা বলেন।
বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএসপি