‘গরিবের কষ্ট আমি বুঝি, তাই গরিবের ডাক্তার হতে চাই'
‘গরিবের যে কত কষ্ট তা আমি বুঝি, এ জন্যই আমি গরিবের ডাক্তার হতে চাই।’ বহুদিনের কষ্টের পর সাফল্যকে মুঠোবন্দি করে একথাগুলো বললেন সদ্য মেডিকেলে চান্স পাওয়া টাঙ্গাইলের বাসাইলের পশ্চিম পাড়া গ্রামের সাগর মিয়া।
সাগর মিয়া বলেন, ‘বাবা সিএনজি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে গরু লালনপালন করেন ও ঘাস কাটেন। গরুর দুধ বিক্রি করেন। আবার মা হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে আমার পড়াশোনার খরচ দিয়েছেন। আমি যখন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বাবা-মা পরনের কাপড়ও ঠিকমতো কিনতে পারেননি আমার জন্য।‘
টাঙ্গাইলের বাসাইলের পশ্চিম পাড়া গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে সাগর মিয়া। তিনি এবার এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ১ হাজার ৫৮৯তম হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছেন। সাগর মিয়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে সে ৭৭ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন।
সাগর বলেন, আমার পড়াশোনা খরচ দিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পরিবারকে। আমার পরিবারের দুরঅবস্থা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমার বেতন কম নিতেন। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার বাবা সিএনজি চালিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ দিয়েছেন। সঙ্গে আমার মা রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন।
সাগর মিয়ার মা হেনা আক্তার বলেন, আমাদের চার সন্তানের মধ্যে সাগর সবার বড়। ভাঙা-চোরা টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু নেই তাদের। এ ঘরেই পরিবারের সবাই থাকি। আমরা দিন আনি দিন খাই। নিজেরা অনেক সময় খেয়ে না খেয়ে সাগর আর তিন মেয়ের খরচ শত কষ্ট করেও বহন করেছি।
বাবা-মা জানান, সিএনজি চালিয়ে ও গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি লালনপালন করেও ৬ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এমন কষ্টের মাঝেও সন্তানের পড়ার খরচ চালিয়েছি। কোনো সময় একটা ভালো পোশাক কিনে দিতে পারেনি ওদের। যা দিয়েছি তাতেই সে সন্তুষ্ট ছিল। সাগর যেন পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এমনটা প্রত্যাশা করছি।
প্রতিবেশী ও শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল সাগর। সে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, বাসাইল গোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও নলুয়া বিএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও সুনামের সঙ্গে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
তিনি আরও বলেন, সাগরের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে খরচ তা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা খুবই কষ্ট কর। কেউ যদি তাকে সহায়তা করে তাহলে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ হবে। এদিকে, সাগর মিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পাওয়ায়
আমরা এলাকাবাসীর লোকজন গর্বিত ও অনেক আনন্দিত।
এসএন