কোম্পানীগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযানে হামলা, আহত ৩
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর সরকারি খাস জমি দখল করে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় ভূমি কার্যালয়ের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছে দখলকারীরা। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন।
বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে উপজেলার মুছাপুর ক্লোজারের মুখে জেগে উঠা নতুন চরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুছাপুর ইউনিয়নের ক্ষমতাসীন দলের এক জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আজগর জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন সরকারি খাস জমি দখল করেছে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক মাটির ভিটা বানানো হয়েছে এবং দুই ধাপে ৩০টি ঘর নির্মাণ করে। একপর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল আমিন অভিযান চালিয়ে প্রথম ধাপে নির্মাণ করা ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দেন। এরপর আবার ভূমি দস্যুরা বুধবার ভোরে আবার ওই খাস জায়গার উপর ১২টি ঘর নির্মাণ করে। এবারও খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে আবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে অবৈধ ঘরগুলো উচ্ছেদ করতে গেলে দখলদাকারীরা ভূমি কার্যালয়ের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে ভূমি কার্যালয়ে তিনজন কর্মী আহত হন। পরে পুলিশের বাধার মুখে দখলকারীরা পিছু হটে।
আহত উপজেলার বামনী তফসিল অফিসের অফিস সহায়ক আব্দুল জব্বার, বাংলাবাজার তফসিল অফিসের তহসিলদার জয়নাল ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাজ্জাদ রোমন বলেন, পুলিশ ধাওয়া দিলে দখলকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামলা দিলে আমরা মামলা নেব।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী এসিল্যান্ডের বরাত দিয়ে বলেন ভূমি অফিসের একজন স্টাফকে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। আজকে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বাকিটা আগামীকাল করা হবে।
ডাকাতিয়া নদীর ওপর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় নদী থেকে আনুমানিক ৭০০ একর নতুন চর জেগে উঠে। স্থানীয় ইউপি সদস্য দুই শতাধিকের উপরে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর আবাদযোগ্য ও অনাবাদি খাস জমি দখল করে সেখানে বসতঘর করার জন্য মাটির ভিটা বানাচ্ছে। প্রত্যেকটি ভিটার পরিমাণ হবে এক একর। অভিযোগ রয়েছে এর জন্য ভিটা প্রতি নেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মুছাপুর ক্লোজারের সামনে জেগে উঠা চরে পাঁচটি স্কেবেটারে মাটি কেটে ভিটা বাধার কাজ শেষ করেছে। এখন রাতের অন্ধকারে অবৈধ ঘর বানানো হচ্ছে। এতে তদারকি চালাচ্ছে প্রায় শতাধিক মানুষ। গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে যাওয়া নিষেধ বলেও জানান তারা।
চর দরবেশ এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে কালাম খাস জায়গায় মাটি কাটার কাজ করছে। কালাম জানান জানান, মুছাপুরের চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় জনগণ এখানে ভিটা ভরাটের কাজ করছে। আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবার হবে। এ জায়গার মধ্যে বাড়ি হবে। স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর জানেন। তারা অর্ডার দিয়েছেন। মেম্বারের ভাই জালাল সবাইকে বসিয়ে দিচ্ছেন। আপনার কি কাউকে টাকা দেওয়া লাগছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের ভিটা নিজেরা বেঁধে নিচ্ছি। এতে চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী আজগর জাহাঙ্গীর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে উপজেলা থেকে অথবা বোর্ড অফিস থেকে কোনো নির্দেশ এলে আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে এটার প্রতিবাদ করব এবং বন্ধ করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খাস জায়গা, না ব্যক্তি মালিকানার জায়গা এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি জানি এটা নদী ছিল তারপর চর জাগে। এরপর কাউকে বন্দোবস্ত দিয়েছে কি না- এ বিষয়ে জানা নেই। কাউকে বন্দোবস্ত দিলে সে পেয়েছে। আর খাস থাকলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, আমার দুই ভাই ও আমি খাস জায়গা দখলের সঙ্গে জড়িত নেই। আমি খাস জায়গা দখলের বিষয়ে পরিষদে জানিয়েছি।
এসএন