নীরব অত্যাচারে অতিষ্ঠ পিডিবির প্রিপেইড গ্রাহকরা
কিশোরগঞ্জে নতুন মিটারের আবেদন করলেই গ্রাহকদদের দেওয়া হচ্ছে পিডিবি প্রিপেইড মিটার। প্রিপেইড মিটার নিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও একপ্রকার বাধ্য করেই প্রিপেইড মিটার দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষের জন্য এই প্রিপেইড পদ্ধতি অনেক জটিল। কিশোরগঞ্জে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে মোট ৬৯ হাজার ১৯৪ জন। তার মধ্যে প্রিপেইডের গ্রাহক ২ হাজার ৪৪৫ জন। বাকী ৬৬হাজার ৭৪৯ জন গ্রাহক সাধারণ মিটার ব্যবহার করছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন সময় সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা খুবই নগন্য বলে জানিয়েছেন কয়েকজন গ্রাহক।
এছাড়াও আরও অনেক সমস্যা যেমন- প্রিপেইড মিটারের ভেতরের ব্যাটারি ডিসচার্জ (নষ্ট) হলে হঠাৎ যে কোনো সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর মিটারের বর্তমান অবস্থার ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করতে হয়। অনুমোদন হতে এক থেকে দুই দিন সময় লাগে। মিটারে ৩০০ টাকা রিচার্জ করার পর অনুমোদন দেওয়া হয়। স্মার্ট কার্ডের গ্রাহকদের অফিস চলাকালীন একমাত্র বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে টাকা রিচার্জ করতে হয়।
সাধারণ রিচার্জ কার্ড গ্রাহকদের বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে ফ্রি অথবা মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) থেকে প্রতি ১হাজার টাকায় ২০ টাকা ফি দিয়ে রিচার্জ করতে হয়। মিটারের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে গিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি ও ঝামেলা পোহাতে হয়। কিলোওয়াট বাড়ানোর অনুমতি পাওয়া কঠিন। টাকা বেশি খরচ করলে সহজে পাওয়া যায়। মিটার স্থানান্তর, প্রতিস্থাপন, নষ্ট হলে, রিচার্জ কার্ড হারালে, কিলোওয়াট বাড়ানো সহ বিভিন্ন সেবার জন্য অতিরিক্ত ফি বিদ্যুৎ অফিসের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয় অথবা বিল রিচার্জের সময় অগ্রিম টাকা কেটে নেয়।
বত্রিশ এলাকার বাড়িওয়ালা সুমন জানান, নতুন বাসার জন্য মিটারের আবেদন করার পর প্রিপেইড মিটার দিয়েছে।এখন ৬টা ডিজিটাল ও ১টা নরমাল মিটার আছে আরও নতুন ২টা মিটারের আবেদন করেছি। এখন বুঝতেছি প্রিপেইড মিটারের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। আর ভোগান্তির নতুন মাত্রা ২২০ ডিজিট। এই মাসে প্রতিটি মিটার রিচার্জে ২২০ ডিজিট মিটারের বাটনে চেপে রিচার্জ সম্পন্ন করতে হয়েছে।
তাছাড়া প্রিপেইড মিটার যে কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তা দিয়ে শুধুমাত্র একটি এসি চালানো সম্ভব। এসি চালাতে হলে কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য পূনরায় আবেদন করতে হয়। টাকা জমা দেওয়ার পর কিলোওয়াট বাড়ানো হয়। এছাড়াও প্রতিমাসে ১০০টাকা অগ্রিম কেটে রাখে। মিটারের বেসপ্লেট বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ খোলার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং মিটার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সফটওয়্যার বা অনলাইনে কোনো সমস্যা থাকলে রিচার্জের কাজগুলো বিলম্ব হয়।
শোলাকিয়ার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক আনোয়ার জানান, আগের নিয়মে প্রিপেইড মিটারের বিল দেওয়া সহজ ছিল,তখন ২১ডিজিট চাপলেই রিচার্জ হয়ে যেতো। এখন এইমাসের নতুন নিয়ম ৩২০টা সংখ্যা তুলতে অনেক গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। টোকেনের একটা সংখ্যা ভুল হলে রিচার্জ হয় না। তারপর আতঙ্ক মিটার ব্লক হওয়ার,মিটার ব্লক হলে পুনরায় জরিমানা গুনতে হয়। ডিজিটালের ফাঁদে নতুন বিড়ম্বনার মাত্রা প্রিপেইড মিটার।
প্রিপেইড এর এই অত্যাচার আমার মতো আরও গ্রাহক নিরবে সহ্য করছে। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসের কাছে অসহায়।প্রিপেইড মিটারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে গ্রাহকের কিছুই করার থাকে না। প্রিপেইড গ্রাহকরা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন,বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে এইমাসের রিচার্জে বেশি সংখ্যা আসতেছে। এই সমস্যার সমাধান দ্রুত করা হবে। আমরা চেষ্টা করি গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। প্রিপেইড মিটারে প্রবলেম হলে বা কেউ অভিযোগ দিলে আমরা সবসময় দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন বলেন, প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ও রিচার্জের কাজটা এই অফিস নিয়ন্ত্রণ করে। বাকী সব কাজ ঢাকার সেন্ট্রাল অফিস থেকেই করা হয়। গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি মিটিংয়ের দোহাই দিয়ে হয়রানির বিষয়ে কোন কিছু বলতে রাজি হননি।
এএজেড