আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বালু উত্তোলন, পাড়ে ভাঙ্গন
অর্ধশত কোটি টাকা ব্যায়ের নদী খনন প্রকল্পের সুফল পেতে না পেতেই নতুন ভাঙ্গন আতঙ্ক শুরু হয়েছে ধলেশ্বরী নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে অবৈধ ড্রেজার মেশিনে দেধারছে তোলা হচ্ছে বালু। এতে করে প্রতিনিয়ত ধ্বসে পরছে পাড়। ব্যহত হচ্ছে সরকারের যুগান্তকারী উদ্দেশ্য। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা খেয়া-ঘাট সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই বালু তোলার মহোৎসব।
বালু তোলার লিখিত বা রেজুলেশন অনুমোদন না থাকলেও ইউএনওর মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে চলছে বালু উত্তোলন। এ কর্মযগ্যে অসাধু একটি চক্র জাল বুনেছে বাণিজ্যের। সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী, যুবলীগ নেতা মনির মিয়া, আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগ কর্মী মো. সায়েদুরের এই বালু উত্তেলনের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘদিন ধরে মানহীন কাটিং মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বৈদ্যুতিক ৫টি পিলার রাস্তার ওপর কাত হয়ে পরে গেছে, বন্ধ রয়েছে সংযোগ। এলাকাবাসী একাধিকবার বালু উত্তোলন বন্ধে বাধা দিলেও কার্যত কোন ফলাফল পায়নি। বরং সরকারি প্রকল্পে মাটি যাবে বলে বাঁধা দিলে হামলা-মামলার ভয় দেখিয়েছে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ড্রেজার মেশিন যেখানে বসানো হয়েছে সেখানকার দু পারেই ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। মেশিন থেকে তোলা এই বালু হাজার মিটার দূরে একটি বেডে(চারিদিকে পারযুক্ত মুক্ত যায়গা) গিয়ে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জায়গাটি সাবেক নারী ইউপি(ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য মাকসুদা বেগমে কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এখন বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা না দিলেও আগামী বর্ষায় ভাঙ্গন তীব্র হতে পারে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কখনই এলাকার সুফল বয়ে আনে না। গত কয়কেদিন আগে বালু ব্যবসায়ীদের বাঁধা দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ভূমি অফিসের নায়েব এসে জানায় সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পরে বালু উত্তোলনকারীরা সরকারি কাজে বাঁধা দিলে মামলার হুমকি দেয়। তাই কেউ আর কোন অভিযোগ করে না।
এসময় কথা হয় ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সায়েদুরের সাথে তিনি বলেন, সরকারি কাজ শুনে এখানে মেশিনপত্র নিয়ে এসেছি। সিংগাইর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী আমাদের নিয়ে এসেছে। ফিট হিসাবে আমাদের মাটির দাম দেওয়ার কথা। বেডে মাটি ভড়া শেষ হলে গাড়ী যোগে এ মাটি গুলো ফেলা হবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, সরকারি কাজের তথ্য ইউএনও দিবে। আর কিছু জানার থাকলে আমার অফিসে আসেন।
বায়রা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ঝিলন খান বলেন, বিষয়টি জানার পর ড্রেজার দূরে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে বালু উত্তোলন করলে ক্ষতি হবেনা এমন জায়গায় ড্রেজার বসাতে বলা হয়েছে। কিভাবে সেই জায়গা নিরুপন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লগি (বাঁশ) দিয়ে পরিমাপ করে নিতে বলেছি। আর যেখানে ব্যক্তিগত জায়গা নেই এমন জায়গা নির্বাচন করতে বলেছি।
ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প বা সরকারি প্রকল্পে কাজ করার জন্য বাজেট থাকে। সে অর্থ দিয়েও মাটি সরবরাহ করা যায়। আর নদী থেকে ম্যাপ অনুযায়ী বালু তোলা হয় না। ফলে একদিকে জনস্বার্থে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। অন্যদিকে নদী থেকে বালু তোলায় জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রেকৌশলী মো.মাঈন উদ্দিন বলেন, জেলার নদীগুলোতে গত বছর নদী খনন প্রকল্প শেষ হয়েছে। এখন আর নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে চাইলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে সার্ভে করে নেওয়া উচিত। তা না হলে নদী ভাঙ্গনের মুখে পরবে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপন দেবনাথ বলেন, নদীর পাড় ভাঙ্গার বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পেও বালু মহালের বাইরে থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজেড