দখলদারিত্বে পেশা হারাচ্ছে শ্যামনগরের জেলেরা
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১৩৬টি খাস খালের অধিকাংশ খালগুলো দখলের মহোৎসব চলছে। সরকারি খাল দখল ও ভরাট করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছেন প্রভাবশালীরা। এসব স্থাপনায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অসংখ্য কৃষক। অপরদিকে দখলদারিত্বে পেশা হারাচ্ছেন ওই এলাকার সাধারণ জেলেরা।
দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার শিকার খালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে দখলমুক্ত করা হবে আশ্বাস্ত করা হলেও বর্ষা মৌসুম যেন আসে না সংশ্লিষ্টদের কাছে। উপজেলা প্রশাসনের কোনও প্রচেষ্টা না থাকায় বর্তমানে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অবৈধ খাল দখলদারদের আইনের আওতায় আনা এবং দখল ও ভরাটকৃত খাল পুনরুদ্ধার করে কৃষকদের ফসলী মাঠ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কয়েকটি খাল এরই মধ্যে মারা গেছে। কয়েকটি খাল অস্তিত্ব হারানোর পাশাপাশি মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তলদেশে পানির উচ্চতা ক্রমে বাড়ছে। এমন সময় সুন্দরবনের কোলঘেষা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় অবৈধভাবে দখল করে আছে কিছু প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা।
উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের হাত খাটা ও লেবুবুনিয়া খালে নেট পাতা ও বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বারেক আলি। দীর্ঘদিন ধরে খালটি দখল করে রেখেছেন তিনি। স্থানীয়রা খাল দুটি একাধিকবার দখলমুক্ত করলেও তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তার দেখাদেখি আরও অনেকে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে খালে মাছ চাষ করে চলেছেন। এতে দখলদারিত্বের চাপে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়ে জমছে পলি, ভরাট হচ্ছে খালের তলদেশ। অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে ওই খালগুলো। সেইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি পরিবেশ। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
কৈখালীর পারানপুর গ্রামের সাহাজান সিরাজ বলেন, খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের বর্ষা মৌসুমেতে ফসলের ক্ষতি হয়। জলাবদ্ধতায় ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে থাকে।
বাবু নিমাই মন্ডল নামের আরেকজন বলেন, যে সকল খালগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলোতে এক সময় নৌকা চালাতে দেখেছি। তবে দখলের কারণে বর্তমানে পানি প্রবাহ কমে খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৈখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, এ ইউনিয়নে ২১টির মতো খাল আছে। যার বেশিরভাগই প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছে। এই এলাকার মানুষ কৃষির উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু খালগুলো অবৈধভাবে দখল হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
খালগুলো দখল বা ইজারা দিলে ওই এলাকার কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশের উপর মারাত্বক প্রভাব পড়ে জানিয়ে পরিবেশ কর্মী পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু বলেন, খাস খালগুলো দখল হওয়ার কারণে আগের মতো গরু ছাগলরা পানি খেতে পারে না। গরীব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের সাথে দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে যে মাছগুলো পাওয়া যেত সেগুলো আর পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বলেন, খাস খাল দখলদারদের কাছ থেকে রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমে উপজেলায় যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ