ব্ল্যাক রাইস ধানের চাষ, অন্য কৃষকরাও হচ্ছেন আগ্রহী
দিনাজপুরের হিলিতে এই প্রথম বারেরমত ক্যান্সার প্রতিরোধী ব্ল্যাক রাইসসহ ওষধিগুন সম্পন্ন ৪ জাতের ধানের চাষাবাদ শুরু করেছেন মেহেদী হাসান নামের এক কৃষক। নতুন ও আগাম জাতের এই ধানের ভালো ফলন হলে আগামীতে আরও বেশি পরিমান জমিতে চাষাবাদ করার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। অন্যদিকে তার এই নতুন ধানের চাষাবাদ দেখে ও লাভজনক শুনে অন্য কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এদিকে নতুন এই ধান চাষে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সেই সাথে আগামীতে এই ধানের চাষাবাদ বাড়াতে উদ্যোগের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
হিলি থেকে বোয়ালদাড় গ্রামে যেতে সড়কের পার্শ্বেই চোখে পড়বে কালো ও বেগুনি বর্নের নতুন এই জাতের ধানের ক্ষেত। ধানের এমন রং এর কারনে সড়ক দিয়ে চলাচলরত মানুষসহ অন্যান্য কৃষকদের মনে কৌতুল তৈরি করছে। অনেকেই রাস্তা থেকে জমিতে নেমে ধান ও গাছ নেড়ে চেড়ে দেখছেন আবার কেউবা ছবি তুলছেন। বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান মেহেদি হাসান। বিভিন্ন ব্যাংক ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি করেছে দীর্ঘ ১৮বছর। পাশাপাশি একটি কলেজের অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এর পাশাপাশি করেছেন কৃষিকাজ এবার ভালোভাবে সেই কৃষিকাজ করতে চাকুরি ছেড়ে গ্রামে এসে শুরু করেছেন কৃষিকাজ। বোয়ালদার মাঠে প্রথমে ফলের বাগান করে সফলতা দেখিয়েছেন। এবার তিনি পরিক্ষামুলক ভাবে এই প্রথম প্রায় ৯ বিঘা জমিতে ক্যানসার প্রতিরোধক চায়না, ফিলিপাইন, ব্ল্যাক রাইস, ফাতেমা ও জিন্ক রাইছ বেগুনি জাতের ৪ প্রকার জাতের ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন। তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা এই জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদি হাসান বলেন,আমি একজন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা এর আগে আমি নতুন কিছু ফলের জাত লাগিয়েছিলাম। এর পাশাপাশি এবারই প্রথম নতুন করে ব্ল্যাক রাইস নামের নতুন ধান চাষাবাদ করেছি। আমি এখানে চায়না, ফিলিপাইন, ব্ল্যাক রাইস লাগিয়েছি। এছাড়া জিংক রাইস বা বেগুনি রাইস ও ফাতেমা জাতের ধান লাগিয়েছি। এসব জাতের ধান আমি নাটোরের ইমরান ঢাকার মোক্তাদিন ও পার্বতীপুরের সায়েদের নিকট থেকে সংগ্রহ করি চাষাবাদের জন্য। আমি নিজে ৫বিঘা জমিতে এই জাতের ধান লাগিয়েছি আর আমার দুই জন পার্টনার রয়েছে যারা কিনা ২বিঘা করে ৪বিঘা এসব ধান লাগিয়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস আমাকে সবধরনের পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি এবারে পরিক্ষামুলকভাবে ভালো ফলনের আশায় এই ধান লাগিয়েছি। গাছের যে অবস্থা যেভাবে ধান ধরেছে তাতে করে আমি আশা করছি মোটামুটি ভালো ফলন পাব। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এলাকার কৃষকরা যেন ধরাবাধা জাতের ধান চাষ থেকে বেরিয়ে সুবিধাজনক ও লাভজনক চাষ করতে পারে সেটি ফল হোক অথবা ধান চাষ। এই ধানগুলোর অনেক মুল্য বেগুনি জাতের ধান ৮ থেকে ১০হাজার টাকা মন এটি যদি বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০মন পায় তাহলে তো ৮০ হাজার থেকে ১লাখ টাকা পাওয়া যাবে যা কিনা বিশাল ব্যাপার। আর ফাতেমা জাতের ধান বিঘাপ্রতি ফলন হবে ৪০মন করে এটি যেন ১হাজার করে ধরি তাহলে ৪০হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
আর সবচেয়ে দাম বেশী ও অনেক পুষ্টিগুন সম্পুর্ন কালো রংয়ের ব্ল্যাক রাইস ধান। আমি আগোরা ও মিনা বাজারে এই ধান ৭ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে শুনেছি যা কিনা চিকিৎসকেরা খেতে বলেন। ইতোমধ্যেই আমার এই ধান চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও বেশ আশাবাদী হয়েছেন। তারাও এখন আমার দেখাদেখি এই জাতের ধান লাগানোর আশায় আছেন। সে মোতাবেক তারা নিয়মিত জমিতে গিয়ে আমার ধান দেখছেন ও আমার নিকট থেকে নানা পরামর্শ নিচ্ছেন।
তারা আমার নিকট থেকে বীজ চাইছেন আগামীতে রোপন করার জন্য। পরিক্ষামুলকভাবে প্রথমবারের মত শখের বসে আবাদ করা এসব জাতের ধানের মধ্যে ইতোমধ্যেই কিছু জমির ধান কর্তন করেছি তাতে করে ফলন বেশ ভালো পেয়েছি। এসব ধানের বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে এই জাতের ধানের চাষাবাদ বাড়াতে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক সিদ্দিক হোসেন বলেন, আমি কাজের সুবাদে প্রতিদিন বোয়ালদাড় থেকে হিলিতে যায়। যাওয়ার পথে বোয়ালদাড় গ্রামে সড়কের পার্শ্বে প্রথম যখন এই ধান রোপন করা হয় নিয়মিত দেখা যেত। প্রথম যখন এই ধান রোপন করা হয় তখন লালচে বর্নের। পরবর্তীতে যত দিন গড়ে গাছ যখন বড় হয় তখন সেটি কালো রঙ ধারন করে। ধানের রং দেখে প্রথমে মনে হয় ধানের গাছগুলো পুড়ে গেছে। পরে যে ধান লাগিয়েছে তার কাছে জানতে চাই সে বলে এই ধানের রঙ কালো যার নাম ব্ল্যাক রাইস।
কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন,এটা একেবারে নতুন এক ধরনের ধান যা কিনা কালো বর্নের। এই ধান অন্যান্য ধানের তুলনায় আগেই কার্তিক মাসেই আসছে। যা কিনা আসার অগ্রায়ন মাসে আসার কথা সেখানে আগেই আসছে কি অবাক কাণ্ড। সেই ধান ভালোই হয়েছে দেখছি এরকম আগেভাগেই যদি ধান উঠে আসে তাতে করে রবিশষ্য লাগানো ভালো হবে যাতে করে কৃষকদের জন্য সুবিধা। এতে করে আমরাও তার মত আগামীতে এই ধান চাষাবাদ করার চিন্তা করছি।
কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তো হঠাৎ করে মাঠের দিকে নজর যেতেই জমিতে নতুন ধরনের কালো বর্নের ধান লাগানো দেখতে পাই। পরে নিচে নেমে ধানটি নেড়ে দেখি ও এর নাম জানার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি এই ধানের নাম ব্ল্যাক রাইস এটি নাকি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জমি থেকে উঠে আসছে। আগাম ধান উঠে আাসার কারনে যেসব কৃষক জমিতে রবিশষ্য লাগায় তাদের জন্য সুবিধা হবে। সে হিসেবে দেখছি যে এই নতুন জাতের ধানটি লাগানো যায়।
কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, শুনেছি এই ধান নাকি ওষধের মত কাজ করে যার কারনে দাম অনেক। আমাদের এই অঞ্চলে এবারই প্রথম এই ধানের চাষাবাদ করেছেন ধানের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে ফলন নাকি বেশ ভালো এর উপর এই ধান আগাম উঠে। যার কারনে আমিও আগামীতে এই ধান লাগানোর চেষ্টা করছি যার কারনে কৃষক মেহেদি ভাই এর নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করে রাখবো।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় এবারেই প্রথম ব্ল্যাকরাইস ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। মেহেদি হাসান নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা নতুন এই জাতের ধান লাগিয়েছেন। ধানের গাছ ভালো হয়েছে তাতে করে আমরা আশা করছি বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫মন করে এই ধানের ফলন পাবেন কৃষক। এই জাতটি একেবারেই নতুন ও অনেক প্রসিদ্ধ একটি ধানের জাত। এই ধানে এন্ট্রিসায়োরিন রয়েছে যেটি কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধি।
এছাড়া এন্ট্রি অক্সিজেন্ট আছে জিংক আছে সেই সাথে প্রোটিনের পরিমান ভালোভাবে আছে সোডিয়ামের পরিমান আছে যা কিনা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। নতুন এই ধানের চাষ থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই তার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমরা আশা করছি ধানের নতুন এই জাতটি আমাদের উপজেলায় সম্প্রসারিত হবে।
এএজেড