শীষ আসা ধানক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আগাছা মারা বিষ প্রয়োগ করে কৃষকের দেড় একর শীষ ধরা আমন ধানের ক্ষেত পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় একটি মামলা হলে একজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমন ধানে ভরা সবুজ মাঠের মাঝে দেড় একর জমিতে চোখে পড়ে পুড়ে লালচে হয়ে মরে যাওয়া পাতা ও বিবর্ণ ধান গাছ। ওই মালিক হাবিবুর রহমান উপজেলার রতিশোলা গাড়ি গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। তিনি চলতি আমন মৌসুমে প্রায় আড়াই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। বীজ-সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে আবাদ করেন। চাচাতো ভাই মোজাম্মেল হকের ছেলে রহেদুল ইসলামের সঙ্গে জমিজমা বিরোধ চলছিল অনেক দিন ধরেই। শত্রুতার বসে গত ৩ অক্টোবর (সোমবার) রাতে রহেদুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা হাবিবুরের আবাদ করা জমিতে আগাছা মারা বিষ প্রয়োগ করেন। এতে প্রায় দেড় একর জমির ফসল পুড়ে যায়।
এই ঘটনায় হাবিবুর রহমান ৪ অক্টোবর রাজারহাট থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেলে ৬ অক্টোবর একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর ৪। এই ঘটনার মূল হোতা রহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। বাকি আসামিরা হলেন, রহেদুল ইসলামের দুই ভাই জায়েদুল ইসলাম, খাদেমুল ইসলাম, রহেদুল ইসলামের ছেলে মনি মিয়া এবং আব্দুল গফুরের ছেলে হারুন মিয়া। সবার বাড়ি একই গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমানের বাবা শামসুল হক এবং রহেদুল ইসলামের বাবা মোজাম্মেল হক চাচাতো ভাই। মোজাম্মেল হক জীবিত থাকাকালীন তার জমি শামসুল হকের কাছে বিভিন্ন সময় বিক্রি করেছিলেন। এই জমি নিয়ে তিনি বেঁচে থাকাকালীন কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর আগে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে তার ছেলে রহেদুল ইসলাম জমি দাবি করে আসছেন। এই নিয়ে এলাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অনেক সালিশ হলেও রহেদুল তার পক্ষে কোনো দলিল দেখাতে পারেননি। কিন্তু তারপরেও তিনি তার বাবার জমি দাবি করে আসছেন। এই নিয়ে মামলাও রয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষকে তিনি মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। এখন প্রভাব দেখিয়ে জমির ফসল নষ্ট করছেন।
কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে আড়াই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এতে করে ৭৫/৮০ হাজার টাকাসহ আনুমানিক একশ মণের বেশি ধান ক্ষতি হয়ে গেল। এর আগে মাস দুয়েক আগেও তার ২৫ শতক আমন বীজ তোলা এবং গত বছর পাকা বোরো ধান এভাবেই পুড়িয়ে দিয়েছিল রহেদুল। এলাকায় রহেদুলের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও অন্য কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, নইমুদ্দি ও লতিফা বেগম নামে দুজনকে ৪৫ শতক জমি বন্ধক দেওয়া আছে। আমার জমির সঙ্গে তাদেরও আবাদ করা জমির ফসলও পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় তিনি একটি মামলা করেন। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
হাবিবুর রহমানের স্ত্রী হাবিবা বেগম বলেন, ধার করাসহ নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে এবার আবাদ করা হয়েছে। এত বড় ক্ষতি করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কীভাবে ঋণ শোধ করব? সন্তানদের নিয়ে চলব কীভাবে দুশ্চিন্তা কাজ করছে? সামনে নবান্ন পালন করা হবে না।
বন্ধক নেওয়া নইমুদ্দি বলেন, হাবিবুরের কাছ থেকে প্রায় ১০ বছর থেকে জমি বন্ধক নিয়ে আবাদ করে সংসার চালিয়ে আসছি। এবারেও ৩০ শতক বন্ধকি জমিতে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ করে আবাদ করেছি। হাবিবুরের জমির সঙ্গে আমার জমিও জ্বলে গেছে।
একই অবস্থা তিস্তা নদীর ভাঙনকবলিত লতিফা বেগম বলেন, হাবিবুরের কাছ থেকে ১৫ শতক বন্ধক নেওয়া জমির আবাদও নষ্ট হয়ে গেছে। এনজিও ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। অসময়ে এমন ক্ষতিতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিস্তি পরিশোধ এবং খাবারের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
গ্রামবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, আনুমানিক একশ বিশ মণ ধান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন বিষ প্রয়োগ করছে ধানের শীষ ও গাছ সব জ্বলে গেছে। ধানের গাছ গরুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না। এমন অমানুবিক কাজ যারা করেছে তার কঠিন বিচার চাই।
গ্রামবাসী আব্দুল্লাহ বলেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের শত্রুতা থাকতে পারে। তার জন্য কোট-কাচারি, থানা আছে। ফলন বাড়ানো জন্য সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে তেল, সার, কীটনাশক। শত্রুতা বসে ফসলহানী করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই। যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এই বিষয়ে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু সরকার জানান, বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দেড় একর জমির ফসল পুড়িয়ে ফেলার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে একটি মামলাও হয়েছে। রহেদুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
এসএন