চুয়াডাঙ্গায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৬ জনকে পেটালো পুলিশ!
সামান্য বিষয় নিয়ে দুই প্রতিবেশির মধ্যে কথা কাটাকাটি। এরপর হাতাহাতির এক পর্যায়ে মারামারি করে থানায় অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের তদন্ত গিয়ে বেপরোয়া পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ একই পরিবারের ৬ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার পাল্টা অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামে।
কুন্দিপুর গ্রামটি বেগমপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডভুক্ত। এ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সালেহ জানান, ঈদকে সামনে রেখে গ্রামবাসীরা সমিতি করে টাকা জমিয়ে গরু কেনে। এটাকে ‘গোশ সমিতি’ বলে। গ্রামের বেলেমাঠ পাড়ার মুদি দোকানি হোসেন আলীর নেতৃত্বে এ ধরনের একটি সমিতি করেছিল মহল্লাবাসী। কিন্তু গতকাল (২১ এপিল) মোস্তফা নামের একজন তার জমা দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু সমিতির নিয়ম অনুযাযী হোসেন আলী টাকা ফেরত দিতে পারবে না বলে জানায়।
এ নিয়ে হোসেন আলী ও মোস্তাফার মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারিতে জড়ায় দুজন। এ সময় হোসেন আলী বাঁশের লাঠি দিয়ে মোস্তাফার হাতের কনুইয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনায় মোস্তফা দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ দেন।
ওই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই পুলিশ অভিযুক্তসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে হোসেন আলী বলেন, “গতকাল ২১ এপ্রিল দুপুরে ক্যাম্পের মজিবর দারোগা আমার মোবাইলে ফোন করেন। বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আপনি কোথায়?’ আমি তখন চুয়াডাঙ্গায় ছিলাম। বললেন, ‘বাদীর সঙ্গে কথা বলে বিকালে জানাবো কখন ক্যাম্পে আসতে হবে।’
“এরপর ইফতারের পর ৫-৬ পুলিশ এসে আমার দোকান ঘিরে ফেলে। আমি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একটা গলির মধ্যে তারা আমাকে ধরে ফেলে কিল-ঘুষি ছাড়াও হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়।”
“তখন আমার পরিবারের লোকাজন ও মহল্লাবাসী প্রতিবাদ করলে তাদের উপরও পুলিশ চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ চলে যায়। এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পর দর্শনা থানা থেকে মোটরসাইকেল করে ১৫-২০ জন পুলিশ আসে। তারা আমার বাড়িতে ঢুকে আমার ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।”
“আমার বৃদ্ধ মা জমেলা খাতুন (৭০), আমার ছোটভাই বাবু (২৮), বাবুর ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জাকিয়া খাতুন (২৩), বড়ভাই মুসা (৩৩) তার স্ত্রী শিউলী খাতুনকে (২৮) মারধর ও গালিগালাজ করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। তারপর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। আমি বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। পুলিশ এখন গণমামলার ভয় দেখাচ্ছে।”
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল কবীর বলেন, “অভিযোগ পেয়ে আমি হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠাই। ক্যাম্পের ইনচার্জ তাপস কুমার সঙ্গীয় ফোর্সসহ কুন্দিপুর গ্রামের অভিযুক্ত হোসেন আলীর দোকানের সামনে গেলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্ধকারে পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় তার পরিবারের লোকজন ‘পুলিশ মেরেছে’ বলে সিনক্রিয়েট করে। তখন পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এক পর্যায়ে আমাকে জানালে, আমি থানা থেকে পুলিশ পাঠাই। তখনও এরা থানা পুলিশদের নিয়ে সিনক্রেয়েট করে।”
“অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ওই পরিবারের ৬-৭ জনকে মারধর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করার বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি বলেন, এগুলো মিথ্যা। গ্রামবাসীর কাছে শুনলেই জানতে পারবেন। বরং ওরাই আমার পুলিশ সদস্যদের ওপর সিনক্রিয়েট করেছে।”
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা (ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) হামিদুল্লাহ বলেন, “আমি পাশের গ্রাম ডিহিকৃষ্ণপুরে নিজের বাড়িতে ছিলাম। রাত ৯টার দিকে দর্শনা থানার ওসি সাহেব থানার ডিএসবি কামালের মাধ্যমে আমাকে ফোন করে কুন্দিপুর গ্রামে ডেকে নেন। তখন ওখানে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। এরপর বিষয়টি মীমাংসার জন্য আজ (শুক্রবার) বিকাল ৩টায় সবাইকে ডেকে নিয়ে থানায় বসবে বলে ওসি সাহেব জানান। আমাকেও থাকতে বলেন।”
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন’ “এটি একটি বিছিন্ন ঘটনা। আমি সব পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নিয়েছি। পুলিশ আসলে কাউকে মারধর করেনি। ওরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
এমএসপি