বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল
ধারণক্ষমতার তিনগুণ ভর্তি ডায়রিয়া রোগী, সেবা দিতে হিমশিম
বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। ফলে রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, গত মাসে হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা মার্চের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২ জন। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১৩টি। তাই বাধ্য হয়ে বাকি রোগীরা মেঝেতে চাঁদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মার্চের শুরু থেকেই আশঙ্কাজনক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
রবিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংকট থাকায় মেঝেতে চাঁদর বিছিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিচতলার মেঝেতে অপরচ্ছিন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে অবস্থান নিতে হয়েছে রোগীদের। এতে রোগীদের জন্য চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালের সিঁড়ির পাশে জেনারেটরের সামনে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন সদর বরগুনার কুমরাখালী এলাকার পারুল (৩৪)। শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেই অবস্থান নিতে হয়েছে তাকে।
বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের পারভীনের (৩০) ঠাঁই হয়েছে নিচতলার মেঝেতে চলার পথে। তার বিছানার বিপরীতেই দুটি টয়লেট। এই টয়লেটের নোঙড়া পানি মেঝে গড়িয়ে প্রায় বিছানা পর্যন্ত পৌঁছেছে। অপরদিকে তাকে স্যালাইন দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিদ্যুতের অন-অফ সুইচের সঙ্গে।
পারুল বলেন, দেশের এতো উন্নতি হয় আর আমাদের হাসপাতালের হয় খালি অবনতি। এখানে থাকলে আমার অসুখ আরো বাড়বে।
সদরের ছোট বদরখালী এলাকার রিয়াজ বলেন, গত বুধবার বাচ্চা ভর্তি করেছিলাম। কিন্ত অবস্থার উন্নতি হয়নি। এই রকম পরিবেশে থাকলে সুস্থ হবার সম্ভবনা দেখছি না।
সদরের গৌরিচন্না এলাকার নাসির বলেন, কোন রকম হাটার জায়গায় বিছানা পেতেছি। স্যালাইন লাগাতে হয়েছে রেলিংয়ে ঝুলিয়ে। এভাবে মানুষের চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ যাবোই বা কই?
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, প্রথমে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা। পরে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন তারা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় বাড়িতে ডায়রিয়ার রোগী আছে। যার মধ্যে অনেকেই যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে পারেন না।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের নতুন ভবনে আলাদা বেডের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক (আবাসিক) সোহরাব উদ্দীন জানান, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই, নেই শয্যাও। এ অবস্থায় হঠাৎ বিপুল সংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় আমরা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে দু-একদিনেই প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট দেখা দেবে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে।
এ ব্যাপারে বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ চেষ্টা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শতভাগ বিশুদ্ধ পানি মানুষকে দেওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়রিয়া থেকে রেহাই নেই।
এসআইএইচ