সুনামগঞ্জে ফের ঢলের শঙ্কা, হাওরের ফসল নিয়ে ঝুঁকি
গত কয়েদিনে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও ঢলের পানির চাপ না বাড়ায় সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
এরইমধ্যে আবারও শঙ্কার খবর এল কৃষকদের জন্য। আগামী ২৪-৭২ ঘন্টায় নদীর পানি ফের বাড়তে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সুনামঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমাসহ সুনামগঞ্জের সব নদনদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
পাউবো জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘন্টায় ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের ফসল ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো, জহিরুল ইসলাম বলেন, গত চারদিন ধরে প্রতিটি নদীতেই পানি কমছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী ৭২ ঘন্টা মেঘালয় ও আসমে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরপূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নদ নদীর পানি দ্রুত বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জে হাওর তলিয়ে ফসল নষ্টের পাশাপাশি নতুন করে বেশ কয়েকটি বাঁধে ফাটল ধরায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে জেলার কয়েকটি হাওরের ফসল। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বর্ধিত গুরমা হাওরের ‘বাগমারা’ নামক ফসলরক্ষা বাঁধটি ধসে পড়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে বাঁশ, কোটা দিয়ে কোনো রকমে বাঁধটি টিকিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাগমারা বাঁধটি পুনরায় নির্মাণ করতে না পারলে ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার নোয়াল, খাউজ্যাউরি ও বংশীকুণ্ডাসহ ৩টি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর জমির ধান পানির নীচে তলিয়ে যাবে।
হাওরপাড়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর মধ্যে দিরাইয়ের চাপতির হাওরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল, ধর্মপাশার চন্দ্র সোনারতাল হাওরে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও বৃহত্তর টাঙ্গুয়ার হাওরে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ জেলার ১২ উপজেলার ছোট বড় ২০টি হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসলহানীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়াও সর্বশেষ তাহিরপুরের এরালিয়াকোনা হাওর, ধর্মপাশার মুক্তারখলা হাওর পানির নিচে তলিয়েছে।
মাটিয়ান হাওর এলাকার কৃষক আব্দুল মুকিত বলেন, এই বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ হাওরটিতে তাহিরপুর উপজেলা, জামালগঞ্জ উপজেলা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।
তবে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, শনিবার পর্যন্ত জেলায় ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলহানি ঘটেছে দিরাইয়ে। এ উপজেলার ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। ধর্মপাশায় ৯৬৫ হেক্টর, শাল্লায় ২০০ হেক্টর, সদরে ১০০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ২০ হেক্টর, তাহিরপুরে ৮৫ হেক্টর এবং ছাতক উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৪শ ৬৭ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যার মোট আবাদের মাত্র .৮৯ শতাংশ।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরেত পাটলাই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগমারা ফসল রক্ষা বাঁধটি ধসে পড়ায় শনিবার ধসে পড়া বাঁধ পরিদর্শন করেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এসময় এমপি রতন বলেন, আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত জমির মধ্যে যতটুকু ফসল ডুবেছে সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল আসায় এ ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে প্রণোদনা দিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন বাকি হাওরগুলো নিয়ে কাজ করছি। এজন্য তালিকা পাঠাতে কিছুটা সময় যাচ্ছে।
কেএফ/